জমির আইলে ঘাস কাটতে কাটতে মেয়েকে নিয়ে এখন আরও বড় স্বপ্ন দেখেন তিনি।
গাজীপুরের কালিগঞ্জের দক্ষিণবাগ গ্রামের মেয়ে আবিদা সুলতানা শান্তা।
কার্ডে ছবি ছাপা ও পুরস্কারের কথা জেনে সেও মুখ ফুটে কিছু বলতে চায়। অভাবে জর্জরিত পরিবারের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দে তার চোখে জল আসে। মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারলেও ইশারা, চোখ, চেহারার অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে সে কতটা খুশি।
শান্তার ছোট বোন সুরাইয়া আক্তার নবম শ্রেণির ছাত্রী। চার সদস্যের পরিবারে বাবা অন্যের জমিতে মজুরি খাটেন। মা গৃহিনী। অভাবের সংসারে শান্তার বেড়ে ওঠা। ৬ বছর বয়েসে কোন এক মহান ব্যক্তির পরামর্শে শান্তাকে ভর্তি করানো হয় রাজধানী মিরপুর ১৪ নম্বরের সরকারি বাক্ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে। এ বছর শান্তা এ স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছে।
শান্তা ছবি আঁকার পাশাপাশি সেলাই ও খেলাধুলায় বেশ দক্ষ। শান্তার মা রহিমা বেগম বাংলানিউজকে জানান, স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগ থেকে শান্তা মাটিতে আঁকাআঁকি করতো।
মুঠো ফোনে যখন কথা হচ্ছিল রহিমা বেগমের পাশেই ছিলো বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শান্তা। মা ও ছোট বোনের কাছ থেকে জেনে নিলেন তার আঁকা ছবি নিয়ে কথা হচ্ছে।
রহিমা বেগম জানান, পুরস্কার পেয়ে তার মেয়ে খুব খুশি। তিনি বলেন, সে এত খুশি বলে বোঝাতে পারবো না।
মুঠো ফোনে যখন রহিমা বেগমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন শান্তার বাবা আলমগীর হোসেন মাঠে ঘাস কাটছিলেন। মেয়ের ছবি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে ছাপার বিষয়ে কথা বলতে ফোন এসেছে শুনে তিনি দৌড়ে বাড়ি চলে আসেন।
মেয়ের প্রতিভা সর্ম্পকে আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মেয়ের ছবি প্রধানমন্ত্রীর কার্ডে ছাপানো হয়েছে আমাদের ভালো লাগছে। আমরা গর্বিত।
আগামী দিনে শান্তা অনেক বড় চিত্রশিল্পী হবে, সারা দুনিয়ায় তার নাম ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা আলমগীরের।
পুরস্কারের অর্থ অনটনের সংসারে গতি আনবে বলে মনে করেন শান্তার মা রহিমা বেগম।
শান্তার মতো এরকম আরো অনেক প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশু এবং তাদের পরিবার প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে খুশি। তাদের ছবি বিভিন্ন উৎসবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া শুভেচ্ছা কার্ডে ছাপা হয়েছে। প্রতিভার স্বীকৃতি গর্বিত করেছে তাদের। পাশাপাশি পুরস্কারের অর্থ অনেক অস্বচ্ছল পরিবারে এনেছে গতি।
এ বছর ৬ জন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর আঁকা ছবি প্রধানমন্ত্রীর নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ডে ছাপানো হয়েছে। অন্য ৫ জন হলেন, আশহাব মুনঈম চৌধুরী, ইব্রাহিম খলিল, ইসাবা হাফিজ, মোহাম্মদ রাহাত এবং সুমা দাস।
আশহান মুনঈম চৌধুরীর মা খাদিজাতুল কোবরা একজন চিকিৎসক এবং বাবা নাইমুল ইসলাম চৌধুরী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান।
নাইমুল ইসলাম চৌধুরী অন্য বাবা-মা ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ধৈয্য ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের চেষ্টা করতে হবে। সন্তানকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলে হবে না।
সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি এবং অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রশংসা করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখন মানুষ অনেক সচেতন, বিশেষ করে শহরগুলোতে। রেস্টুরেন্টে, পার্কে গেলে কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে আত্মীয় স্বজনরা সহজ ভাবে নিচ্ছে অটিস্টিক শিশুদের।
সন্তানের ছবি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে ছাপানোয় নিজের গর্ববোধের কথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন বাংলানিউজকে জানান, ২০১০ সালের ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা কার্ডে প্রথম অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ছবি ব্যবহার করেন। তার আগে পেশাদার চিত্র শিল্পীদের আঁকা ছবি ব্যবহার করতেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খোকন জানান, প্রথম দিকে শুভেচ্ছা কার্ডে ছবির জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিলো প্রধানমন্ত্রীর। এক বা দুই জনের ছবি নেয়া হতো তখন। পুরো টাকা তাদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হতো।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশ থেকে অটিস্টিক শিশুদের পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের আঁকা ছবি সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন। অধিক সংখ্যক শিশু যাতে পুরস্কার পেতে পারে তার জন্য বরাদ্দ বাড়ান।
সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বাছাই করেন। প্রতিটি উৎসবের জন্য তিনি অন্তত ৬/৭ টি বা পছন্দ হলে তারও বেশি সেরা ছবি বাছাই করেন। প্রধানমন্ত্রী যাদের ছবি শুভেচ্ছা কার্ডে ব্যবহার করেন তাদের প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়া হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।
তিনি বলেন, যাতে বেশি সংখ্যক শিশু সুবিধাভোগী হতে পারে এজন্য কোন শিশুর ছবি একাধিক উৎসবের কার্ডে ব্যবহার করা হয় না।
এ পর্যবন্ত ৯৪ জন অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুর ছবির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা কার্ডে ছাপানো হয়েছে। মুসলমানদের দুই ঈদ, বাংলা ও ইংরেজি নর্ববর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা কার্ড ছাপান প্রধানমন্ত্রী। এসব কার্ড দেশি-বিদেশি বিশিষ্টজনদের পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
এমইউএম/আরআই