ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাওদার দাফন রাজশাহীতেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
রাওদার দাফন রাজশাহীতেই রাওদা আতিফ। ফাইল ফটো

রাজশাহী:  শেষ পর্যন্ত রাজশাহীতেই দাফন হচ্ছে মালদ্বীপের মেয়ে রাওদা আতিফের মরদেহ। শনিবার (১ এপ্রিল) বাদ যোহর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাজশাহীর হেতমখাঁ গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

দু’দিন ধরে অনেক চিন্তা-ভাবনার পর মালদ্বীপে মরদেহ না নিয়ে রাওদাকে রাজশাহীতেই দাফনের অনুমতি দিয়েছে তার পরিবার। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতে খায়ের আলম বাংলানিউজকে জানান, এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়ার একটি প্রক্রিয়া ছিল। প্রক্রিয়াটি শেষে আজ রাওদার মরদেহ দাফন হচ্ছে। তার বাব-মা জানিয়েছেন, এখানে দাফনের জন্য তাদের কোনো জনবল নেই। তাই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা নিয়ে তাদের মাধ্যমেই রাওদার মরদেহ দাফন করা হবে।

এরইমধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজপাড়া থানা পুলিশের মাধ্যমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হিমঘর থেকে রাওদার মরদেহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রাজশাহী অর্গানিয়ার মিলন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদের কাছে রাওদার মরদেহ হস্তান্তর করেছে রাজপাড়া থানা পুলিশ। এজন্য সমস্ত কাগজপত্রও তারা বুঝে নিয়েছেন। দাফনের প্রস্তুতিও শুরু করেছেন তারা।

এর আগে শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয় ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা মেডিকেল ছাত্রী রাওদা আতিফের। মালদ্বীপে নিয়ে যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় শুক্রবার রাতে তার মরদেহ আবারও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।

এদিকে, রাওদার মরদেহের ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে শনিবারও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি রামেক ফরেনসিক বিভাগ।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ময়নাতদন্তে থাকা একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, আপাতত আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনো আলামত পাননি তারা। এর পরও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে রাওদার মরদেহ থেকে ভিসেরা সংরক্ষণ করেছেন। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ভিসেরা রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। তখন সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিবেদনও দেওয়া হবে।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাওদার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. মনসুর রহমানকে প্রধান করে টিম গঠন করা হয়। টিমে অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এনামুল হক ও ডা. এমদাদুর রহমান।

ময়নাতদন্তের আগে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে মেয়ের মরদেহ দেখতে যান তার বাবা-মা। সেখানে মেয়ে রাওদার মরদেহ দেখার পর রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ পুলিশকে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানেরও দাবি জানান তিনি।

রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ, মা আমিনাথ মুহারমিমাথের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আইশাদ শান সাকির ও কমনওয়েলথের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইসমাইল মুফিদও ছিলেন।

এর আগে রাওদার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ রিয়াদ জানান, কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. আব্দুল মুকিত সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

গত বুধবার (২৯ মার্চ) রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় রাওদার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।
এই মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১৩তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রাওদা। বিদেশি কোটায় ভর্তির পর গত বছরের ১৪ জানুয়ারি মহিলা হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষে ওঠেছিলেন রাওদা। ওই ব্লকে আরও ১৪ জন বিদেশি ছাত্রী থাকেন।

এক সময় প্রখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের মডেল হয়েছিলেন শখের বসে। শিক্ষার টানে মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশে এসে ভর্তি হয়েছিলেন এই মেডিকেল কলেজে। এরপর লাশ হলেন সদ্য টিন অতিক্রান্ত এই মালদ্বীপি মেয়েটি। এখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে সার্টিফিকেট কোর্সও করছিলেন রাওদা।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
এসএস/জেডএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।