ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাংলানিউজকে মসিউর

বইয়ের লেখা আর প্রয়োগ সব সময় মেলে না

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
বইয়ের লেখা আর প্রয়োগ সব সময় মেলে না ড. মসিউর রহমান- ছবি: জি এম মুজিবুর

[ড. মসিউর রহমান। ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সময়ের ব্যক্তিগত সহকারি। বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা, এনবিআর, পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইআরডিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ-মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুকন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে এই অর্থনীতিবিদ রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সে ভূমিকা আগামীকে আরো বাড়তে পারে। রোববার (১৯ মার্চ) হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবন ‘উত্তরায়ণ’-এ বাংলানিউজকে এক একান্ত সাক্ষাৎকার দেন তিনি। তাঁর এ সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে চার পর্বের এই লেখাটি লিখেছেন বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ]

ঢাকা: ট্যাক্স বইয়ের লেখা আর বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সব সময় মিল থাকে না। বাস্তব প্রয়োগের বেলায় অসৎ কর্মকর্তারা অনেক সময় অনেক নয়-ছয়ের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। অনেক সময় তারা অনেক পণ্যের ওপর মনগড়া বা অন্যায্য ট্যাক্স বসিয়ে দেন।  

বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন অভিমতই ব্যক্ত করেন ড. মসিউর রহমান।

তিনি বলেন, ধরা যাক, একই কোড-এ  আট-দশটি পণ্য রয়েছে। কোনও পণ্যে ২০ শতাংশ ট্যাক্স আবার কোনোটির ট্যাক্স পাঁচ শতাংশ। কর্মকর্তারা চাইলে পাঁচও বসাতে পারেন, আবার বিশও ধরতে পারেন। কর্মকর্তারা কখনও দায় এড়াতে, আবার কেউ কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে পাঁচ শতাংশের পণ্যের ওপর বিশ শতাংশ ট্যাক্স বসিয়ে দেন।  

পরে যা হয়, ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীদের ধরাধরি করেন। এমন ক্ষেত্রে কেউ কেউ আবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে ট্যাক্স কমিয়ে নেন বা নিচ্ছেন। এতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয় বা হচ্ছে। উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে হলে এসব অসঙ্গতি দূর করতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

প্রয়োজনে আইন ও বিধিতে সংশোধনী আনতে হলে সেটাই করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘বিচার বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত’ বলে উল্লেখ করে ড. মসিউর রহমান বিএনপি শাসনামলের  একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি তখন এনবিআর চেয়ারম্যান। আমাকে বলা হলে গমের ওপর আমদানি কর বসাতে। আমি তখন বললাম, গমের ঘাটতির কারণে আমরা রিলিফ নিচ্ছি। একই সঙ্গে ট্যাক্স বসালে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন সাইফুর রহমান। তিনি আমাকে বললেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চায় সেভাবেই করতে হবে।

ড. মসিউর রহমান

পরে কিন্তু গমের ওপর থেকে সেই কর প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে তা কখনও সুখকর হয় না। এতে বরং  নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার জন্য সব রকম সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। প্রয়োজন বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা,  রুল ও প্রয়োগের ঘাটতি দূর করা।

মসিউর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে যখন মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলেছিল, তখন অনেকেই এটাকে সহজভাবে নিতে পারেনি। কেউ কেউ ব্যঙ্গাত্মক কথাবার্তা বলেছিলেন। এখন কিন্তু এটাই বাস্তবতা।


জুন ক্লোজিংয়ের জন্য বর্ষা এলেই সারাদেশে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। এতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। ভারতে মার্চ টু ফেব্রুয়ারি অর্থবছর।  

‘বাংলাদেশে অর্থবছর পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?’ বাংলানিউজের তরফ থেকে জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, জুলাই-জুন অর্থবছর আমাদের সংবিধানে রয়েছে। পরিবর্তন করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করে করতে হবে। তবে আমি মনে করি না অর্থবছর পরিবর্তন করলেই খোঁড়াখুঁড়ির এই সমস্যা মিটবে।  

এখানে প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবই বরং দায়ী। জুনে বাজেট পাশ হলে জুলাই থেকে অক্টোবর এই তিন মাসে প্রকল্প তৈরি হবে। এরপর কাজ শুরু হওয়া উচিত। জুনের জন্য বসে থাকতে হবে কেন!  ধীরে ধীরে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এতে এই সমস্যা দূর হবে বলে মনে করেন তিনি।

প্রশ্ন ছিল, ‘আসছে বাজেটে মৌলিক কোনো পরিবর্তন থাকছে কি?’ জবাবে মসিউর রহমান বলেন, সাধারণত সরকারের শেষ সময়ে এসে বাজেটে মৌলিক কোনো পরিবর্তন করার কথা না। বড় ধরনের বোকা ছাড়া কোনো সরকার নির্বাচনের মুখে এসে বড় ধরনের পরিবর্তন করে না। আমার মনে হয়, বড় কোনো গুণগত পরিবর্তন আসবে না।  

মসিউর রহমান আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন খোলামেলা। তিনি মনে করেন, আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করবে। কেননা এই সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের অবস্থা খুবই নাজুক। বিরোধীদের হয়তো স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে।  কিন্তু ‍সামগ্রিকভাবে আওয়ামী লীগের অবস্থা অনেক ভালো। আর শেখ হাসিনার কৃতিত্বও কম নয়। মানুষ এখন স্বপ্ন দেখতে শিখেছে। তারা চায়, শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হোক বাংলাদেশ।

মসিউর রহমান স্কুল জীবন থেকেই ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী। ১৯৫৭ সালে এসএসসিতে প্রথম গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এইচএসসিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬২ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক জয় করেন।  

১৯৬৫ সালে সিএসপি অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা, এনবিআর, পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইআরডিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় তাঁকে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান।  ‍এখনও রয়েছেন সগর্বে। অনেকে মনে করেন, ভবিষ্যতে তার দায়িত্ব আরও বেড়ে যেতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
এসআই/জেএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।