ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এখন যেমন আছে শায়খ রহমানের আস্তানা ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’!

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
এখন যেমন আছে শায়খ রহমানের আস্তানা ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’! শায়খ রহমানের আস্তানা ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’- ছবিধ: আবু বকর

সিলেট থেকে: ২০০৬ সালের মার্চের প্রথম দিন পেরিয়ে সবে সন্ধ্যা নেমেছে। রাতেই শহরের উপকন্ঠে টিলাগড়ের ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’টি ঘিরে ফেলেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনির সদস্যরা। ভেতরে আটকা পড়েছেন ভয়ঙ্কর জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমান।

১১ বছর পর আবারও এখানকার মানুষ স্মরণ করছেন জঙ্গি সংগঠন জেএমবির তৎকালীন প্রধান শায়খ আবদুর রহমানের শেষ আশ্রয়স্থল এই বাড়িটিকে।

দুইদিনের অভিযানে একতলা বাড়িটির ছাদ কেটে বের করে আনা হয়েছিল এই জঙ্গিনেতাকে।


পূর্ব শাপলাবাগের আ/এ, ২ নং রোডের ব্লক এ'এর ২ নং বাড়িটিই  হচ্ছে বহুল আলোচিত ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’। শায়েখ আবদুর রহমান বাড়িটিকে অভিশপ্ত করলেও বাড়ির নাম পরিবর্তন করেননি মালিক আব্দুল হক।

৭ বছর পর গত অক্টোবরে বাড়িতে আসেন আব্দুল হক। লন্ডনে ফিরবেন আগামী ৮ এপ্রিল। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এরপর আর বাসাটা ভাড়া দিইনি। শায়খ রহমানকে ধরার পর ৯ মাস পুলিশের কাছেই ঘরের চাবি ছিল। আমি দেশে আসি ২০০৯ সালে। সেবার এসে একজন কেয়ারটেকারকে দায়িত্ব দিয়ে যাই। এবার এসে দেখি ঘরের সব জিনিস নষ্ট করে ফেলেছে। এবার আরেকজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। তার ঠিকানা, চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি থানায় জমা দেয়া হয়েছে।

১৯৭৬ সাল থেকেই সপরিবারে লন্ডনে বাস করেন আব্দুল হক। তিনি জানালেন, ১৯৯০ সালে বাড়িটি নির্মান করেন তিনি। সেসময়ে ঐ এলাকায় সিরামিক টাইলড মেঝেঅলা বাড়ি আর একটাও ছিলো না। বাড়িটি তখন এক ইউনিটের ছিল। পরে একটি ইউনিট বাড়ানো হয়।
শায়খ রহমানের আস্তানা ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’- ছবিধ: আবু বকর
একতলা বাড়িটি ঘুরে দেখান মালিক। দুটি কক্ষের মাঝখানে রয়েছে একটি কক্ষ । তার মতে,  সারা বাড়িতে এই কক্ষটাই সবচেয়ে সুরক্ষিত।

‘আমাদের মালামাল এই কক্ষে তালা মেরে রাখা ছিল। শায়খ রহমান ও তার সঙ্গী এবং পরিবার ছিল অন্য দুটি কক্ষে’---বলছিলেন মালিক আব্দুল হক।

‘শায়খ রহমান যখন দেখলেন বাইরের রুমগুলো লক্ষ্য করে গুলি এবং গ্যাস ছোড়া হয়েছে, তখন তিনি এই রুমের তালা ভেঙ্গে আমার রুমে প্রবেশ করেন। পরে যখন ওপর থেকে ওই রুমটি ড্রিল করে ঢোকার জায়গা করা হয়, শায়খ রহমান তখন পাশের তিনটি রুমের সংযোগস্থলের একটি জায়গায় গিয়ে লুকান। তিনটি রুমের মাঝখানে দরজা দিয়ে এমনভাবে রুমটি রয়েছে যে মনে হবে পরেই আরেকটি রুম। মাঝখানের জায়গাটির অস্তিত্ব বোঝাই যায় না। পরে অবশ্য ছাদ ছিদ্র করে কমান্ডোরা ঢুকে পড়ার পর আত্মসমর্পণ করেন শায়খ রহমান। ’

আব্দুল হকের রুমটির ছাদ পরে সংস্কার করা হয়। তবে এখনো বৃত্তাকার ছিদ্রের চিহ্ন রয়ে গেছে।

আব্দুল হক বলেন, ‘এরপর বাড়িটি আর ভাড়া দিইনি। আমার স্ত্রীও বলেছেন, আর ভাড়া না দিতে। নতুন কোন ঝামেলা যেন না হয়। ’

তিনি জানান, লন্ডনে প্রবাসীরা দেশে নিজেদের অস্তিত্বের একটা চিহ্ন রাখার জন্য বাড়িগুলো নির্মাণ করে থাকেন। তবে বাড়ির দেখাশোনার  জন্য অন্য কারো উপরই নির্ভর করতে হয়। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনি, বিশেষ করে থানা, যদি বাড়িগুলোর বিষয়ে নজর রাখে, তাহলে সব দিক দিয়ে ভালো হয়। বিশেষ করে নিরাপত্তার দিকটায়।

আব্দুল হক বলেন, ‘আমরা কিন্তু শায়খ রহমানকে বাসা ভাড়া দিইনি। পাথরব্যবসায়ী হিসেবে হৃদয় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। পরে রাতের অন্ধকারে শায়খ রহমান ঢুকেছিলেন। আমরা বিদেশে থেকে তো আর সব কিছু নজরে রাখতে পারি না!’

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
এমএন/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।