ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশের খোঁজেই টনক নড়ে বাবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
পুলিশের খোঁজেই টনক নড়ে বাবার

ঢাকা: এলাকায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। সেই তল্লাশির পর দুই ছেলে অস্বাভাবিকভাবে উধাও হয়ে যায়। তবু বিষয়টিতে মনোযোগ দেননি ব্যবসায়ী বাবা। রাতে বাসায় দুই ছেলের খোঁজে আসে পুলিশ। এতেই টনক নড়ে বাবার। তিনিও ভাবেন, এলাকায় তল্লাশির পর তার ছেলেরা কেন উধাও হয়ে যাবে?

পরের দিন দুই ছেলেকে ফোন করে বাসায় নিয়ে আসেন বাবা। বাসায় আসার পর ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, কিন্তু সব ঠিকঠাক মনে হচ্ছিল না।

তাই পরামর্শ করতে চলে যান স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে। সংসদ সদস্য পরামর্শ দেন পুলিশের শরণাপন্ন হওয়ার। অবশেষে তা-ই করলেন বাবা। জঙ্গিবাদে জড়িত সন্দেহে দুই ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন।

রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকার ওই ব্যবসায়ী বাবার নাম হাজী আলমগীর হোসেন। তিনি শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় তার সন্দেহভাজন দুই ছেলে দ্বীন ইসলাম ওরফে দিনু (২৫) ও সালমান সাজীদকে (২২) সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশে সোপর্দ করেন।
 
আলমগীর হোসেন কাফরুলের পূর্ব কাজীপাড়া ইটখোলা বাজার এলাকার বাসিন্দা। তার সিমেন্টের ব্যবসা রয়েছে। দুই ছেলে ও বাবা মিলে ওই ব্যবসাই দেখাশোনা করতেন।  

দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ করার পর তার সঙ্গে আলাপ করে বাংলানিউজ। হাজী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার এই এলাকার কিছু যুবককে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরের দিন বুধবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে আমাদের বাসায় পুলিশ আসে। পুলিশ আমার দুই ছেলের খোঁজ জানতে চায়। সেদিন সকাল থেকেই আমার দুই ছেলে বাসায় ছিল না। ’
 
‘যেহেতু এলাকা থেকে অনেককে পুলিশ নিয়ে গেছে, আমার ছেলেরাও তাদের সঙ্গে চলাফেরা করতো। আমি ভেবেছিলাম, হয়তো ভয়ে তারা বাসা থেকে চলে গেছে। কিন্তু যখন পুলিশ আমার ছেলেদের জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার সন্দেহের কথা বলে, বাসায় তল্লাশি চালায় তখন মনে খটকা লাগে। ’

পরের দিন বৃহস্পতিবার ফোন করে ছেলেদের বাসায় ডেকে আনেন হাজী আলমগীর হোসেন। এ নিয়ে ছেলেদের কাছে জানতে চান তিনি। ছেলেরা তাকে উত্তর দেন, তারা জঙ্গিবাদ বা অন্য কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।  

কিন্তু এক ছেলে সন্দেহজনক বাক্য উচ্চারণ করে বাবাকে বলেন, ‘যদি আমরা অন্যায় কিছু করতাম, তাহলে তুমি ডাকলে আমরা আসতাম না। ’
 
হাজী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যেহেতু তাদের নাম আসছে, এখন তারা অন্যায় না করলেও আমার মনে সন্দেহ হয়েছে। যদি তারা জঙ্গিবাদের দিকে পা দেয়, ওই পথতো আগুনের পথ। আগে থেকে সতর্ক না হলে ছেলে দুইটা জ্বলে-পুড়ে যাবে। ’
 
‘তখন বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করার জন্য স্থানীয় এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের কাছে যাই। তার পরামর্শে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি দুই ছেলেকে শনিবার (২৫ মার্চ) পুলিশের হাতে তুলে দেই। ’
 
ছেলেদের চলাফেরায় কখনো সন্দেহ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘না কখনো তেমনটা মনে হয়নি। তারা এক রাতও বাড়ির বাইরে থাকতো না। একসঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করতাম আমরা। কখনোই তারা আমার কথার অবাধ্য হয়নি। ’
 
এক পর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই দোয়া করবেন, আমার দুইটা সোনার ছেলে যদি ওই পথে বা বাড়িয়েও থাকে বা পা বাড়ানোর চিন্তা করে, তারা যেন ভালোভাবে আমার কাছে ফিরে আসে। তারা দেশ-সমাজের কোনো ক্ষতি নয়, যেন উপকার করতে পারে। ’
 
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বলবো, যদি কোনো মা-বাবা তাদের ছেলেকে বাঁচাতে চান, তাহলে খেয়াল রাখুন। সন্দেহ হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্রয় নিন। ’
 
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী তার দুই ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিষয়টি যাচাই-বাছাই চলছে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
পিএম/এইচএ/

আরও পড়ুন
** জঙ্গি সন্দেহে দুই পুত্রকে পুলিশে সোপর্দ করলেন বাবা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।