ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের কারাদণ্ড

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের কারাদণ্ড মন্ত্রিসভার বৈঠক

ঢাকা: ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া পেশাদার বা অপেশাদার চালক গাড়ি চালালে কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রেখে নতুন একটি আইনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
 
 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (২৭ মার্চ) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।  
 
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনে।

 

আইনে গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্যও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
 
আইনে বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পাস না করলে লাইসেন্স পাবেন না চালকরা। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে এক মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
 
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।  
 
উচ্চ আদালতের নির্দেশে আগের অধ্যাদেশকে নতুন করে আইনে পরিণত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, আইনে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
 
তিনি বলেন, আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো শর্ত ছিল না। নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালককে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। চালকের সহকারীরও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া থাকতে হবে। সহকারী হতে হলেও বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্স নিতে হবে।  
 
আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না বলে জানান সচিব।
 
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, নতুন আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড দেওয়া হবে। আগের আইনে এ ধরনের অপরাধের জন্য তিন মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল।
 
ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেপ্তার করতে পারবে বলে জানান সচিব।
 
চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
 
নতুন আইনে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব জানান, কেউ গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। এ আইন ভাঙলে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
 
নতুন আইনে সাধারণ চালকের বয়স আগের মতোই কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।
 
চালকরা যাতে আইন মেনে চলেন, সেজন্য পয়েন্টভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব।  
 
তিনি বলেন, মোট ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। বিভিন্ন অপরাধের জন্য চালকের পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।

দ্য মোটর ভেহিকেল অর্ডিনেন্স-১৯৮৩ থেকে আইনটি করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব।  

তিনি বলেন, পেশাদার ও অপেশাদার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগবে। যদি কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায় অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে।  

অধ্যাদেশে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য ২ বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে সাজা ঠিক রেখে জরিমানা ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।  

ফিটনেস চলে যাওয়ার পরেও মোটরযান ব্যবহার করলে ১ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এই অপরাধে আগের আইনে ছয় মাস জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা হতো।  

দুর্ঘটনার জন্য দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, দণ্ডবিধিতে তিন রকমের বিধান আছে। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের সাজা হবে। খুন না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন। পরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী ৩ বছরের কারাদণ্ড হবে।  

শফিউল আলম বলেন, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে নিহত বা আহত করলে দণ্ডবিধি অনুযায়ী সাজা হবে। দুই গাড়ি পাল্লা দিয়ে‍ দুর্ঘটনা ঘটালে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

দুর্ঘটনায় না পড়লেও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য আইনে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।  

এক্সেল বা ওজনসীমা অতিক্রম (৫ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক এর থেকে বেশি ওজন পরিবহন) করলে গাড়ির মালিক ও চালককে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।  

আইনে মোটরযান চলাচলে সাধারণ নির্দেশাবলী নামে একটি নতুন ধারায় ২৫টি নির্দেশনা  যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব।  

সিট বেল্ট না বেধে গাড়ি চালানো; মহিলা, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং বয়জ্যেষ্ঠ যাত্রীর জন্য সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনো যাত্রী বসলে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড করা হবে।  

মদ পান করে বা নেশাজতীয় দ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালালে, সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালালে, উল্টো দিকে গাড়ি চালালে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য স্থানে গাড়ি থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, চালক ছাড়া মোটরসাইকেলে এক জনের বেশি সহযাত্রী ওঠালে, মোটর সাইকেলের চালক ও সহযাত্রীর হেলমেট না থাকলে, ছাদে যাত্রী বা পণ্য বহন, সড়ক বা ফুটপাতে গাড়ি সারানোর নামে যানবাহন রেখে পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, ফুটপাতের ওপর দিয়ে কোনো মোটরযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭/আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা
এমআইএইচ/বিএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad