ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

আশকোনায় জনমনে এখনও আতঙ্ক, কৌতূহল

রিনা আক্তার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
আশকোনায় জনমনে এখনও আতঙ্ক, কৌতূহল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেয়াল ও মাটিতে এখনো লেগে আছে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। রাস্তার দু’পাশের টিনের বেড়া ও চালা ফুটো হয়ে আছে। হোটেলের রান্নার হাঁড়ি, কাচের সেলফ, টিনের কৌটা, আসবাবপত্রে স্প্লিন্টারের ক্ষত। পাশের মাদ্রাসার সিঁড়ি, দোকানের শাটার সব কিছুতেই যেন ধংসযজ্ঞের চিহ্ন। এলাকার লোকজনদের এখনও আতঙ্ক কাটেনি। এখনো কৌতূহল তাদের মনে।

রাজধানীর আশকোনায় প্রধান সড়কে চেকপোস্টের অদূরে শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পরদিন শনিবারও (২৫ মার্চ) এমন অবস্থাই বিরাজ করছিল ঘটনাস্থলের আশেপাশে।

সরেজমিনে বিমানবন্দর সড়কের বিস্ফোরণস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের চেকপোস্টের সামনে মাটিতে ও আশেপাশের দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে।

দোকানের শাটার,  আসবাবপত্র, পাশের বাবুসসালাম ওয়াক্‌ফ এস্টেট জামে মসজিদ ও জামিয়া বাবুসসালাম (আরবি বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসা) এবং এতিমখানার সিঁড়ি, চেকপোস্টের বিপরীত পাশের রাস্তার দু’পাশের টিনের বেড়া, একটি টিনের ঘরে বোমার স্প্লিন্টারের চিহ্ন জানান দেয় বোমা বিস্ফোরণটি ছোটখাটো নয়। টিনের বেড়া ভেদ করে স্প্লিন্টার অন্যপাশে আঘাত হেনেছে। ঘটনার পর থেকেই আশপাশের মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল, তা এখনও কাটেনি। কোথায় আঘাত হানার জন্য বোমাটি বহন করা হচ্ছিল, তা নিয়েও কৌতূহল কমেনি তাদের।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঘটনার প্রায় ২০ ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে সর্তক ছিল পুলিশ। চেকেপোস্টের বিপরীত পাশের দোকনগুলোতে সচল তিনটি সিসি ক্যামেরা। এছাড়া ঘটনাস্থলের আশেপাশেও সচল রাখা হয়েছে ক্যামেরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ অভি ঘটনার পরদিন বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার আগে আমি চেকপোস্টে বসা ছিলাম। জিন্স প্যান্ট, শার্ট, ও জুতা পরা এক যুবক হেঁটে যাচ্ছিল। হাতে ছিল একটি ট্রলিব্যাগ। হঠাৎ বিকট শব্দে প্রচণ্ড ধোঁয়া বের হতে থাকে। এক পর্যায়ে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারপাশ। পরে ধোঁয়া কমলে যুবকের ছিন্নভিন্ন লাশ পড়ে থাকতে দেখি।
হোটেল মক্কার ম্যানেজার আবুল হোসেন ও চায়ের দোকানের মানিক বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিনের মতই তারা দেকানে বসে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ কানে আসে। এ সময় পথচারীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে দেন। অনেকেই দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেন।

তারা জানান, ঘটনাস্থলে কাছ‍াকাছি জায়গায় তিনটি সিসি টিভি ক্যামেরা বসানো আছে। ক্যামেরার ফুটেজ এরই মধ্যে পুলিশ সংগ্রহ করেছে।

তারা জানান, ঘটনার পর থেকে তারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকার সবাই এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। চারপাশে মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করায় ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।

বাবুসসালাম ওয়াক্‌ফ এস্টেট জামে মসজিদ ও জামিয়া বাবুসসালাম (আরবি বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসা) এবং এতিমখানার নবম শ্রেণির ছাত্র ফজলে রাব্বি।

বাংলানিউজকে সে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলে, শুক্রবার সন্ধায় প্রচণ্ড শব্দে মাদ্রাসা কেঁপে ওঠে। মাদ্রাসার ভেতরে ধোঁয়ার কুণ্ডলি ও বোমার স্প্লিন্টার ঢুকতে থাকে। এ ঘটনায় বাহারউদ্দিনসহ অনেকেই আহত হয় স্প্লিন্টারের আঘাতে।

রাব্বি জানান, এ ঘটনায় মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই এরই মধ্যে মাদ্রাসা ছেড়েছে। যারা এতিম তারাই কেবল বাধ্য হয়ে এখানে রয়ে গেছে।

ওই এলকায় দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট অপূর্ব বাউরি বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।   কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ওসি নূর-এ-আজম বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৭ মার্চ আশকোনায় র্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে একজন নিহত হওয়ার পর দেশের সব বিমানবন্দর ও কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এর এক সপ্তাহের মাথায় বিমানবন্দর থেকে কয়েকশ মিটার দূরে স্পর্শকাতর এলাকায় দ্বিতীয় দফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর আগে র‌্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণকে জঙ্গি হামলা বলেছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
আরএটি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।