ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় শিবুল করের চোখে অন্ধকার

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় শিবুল করের চোখে অন্ধকার ঘাতক বুলেট আঘাতে আহত শিবুল কর/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট থেকে: বাড়ি থেকে বের হয়ে সামনের দোকানে হালকা কেনাকাটার জন্য গিয়েছিলেন শিবুল কর। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ারিংয়ের শব্দ। দ্রুত বাসার দিকে পা বাড়ান ৩০ বছরের শিবুল। কিন্তু পৌঁছাতে পারলেন না। একটি বুলেট এসে বিঁধলো বাম পায়ের উরু এবং কোমরের সন্ধিস্থলে। ভেতরে জমে যায়নি ঘাতক বুলেট। নিতম্ব ভেঁদ করে বেরিয়ে যায়।

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৪ তলার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন শিবুল। শিববাড়ির ‘আতিয়া মহল’ এর পূর্ব দিকে শিব মন্দিরের পার্শ্বে শিবুলের বাড়ি।

শিববাড়ি বাজারে একটি স্টুডিও রয়েছে তার।

রোববার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় হাসপাতালের ওয়ার্ডে কথা হয় বাংলানিউজের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি প্য‍ান্ট পড়া ছিলাম। তবে স্টুডিও বন্ধ থাকায় গতকাল আর যাইনি।

৬ বছর আগে বিয়ে করেছেন জানিয়ে শিবুল বলেন, ৬ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। এছাড়াও পুরো পরিবার আমাকে দেখতে হয়। এখন সকলেই অনিশ্চয়তার দিন কাটাচ্ছে। ছেলেটাকে নিয়ে খুব চিন্তায় রয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের আতিয়া মহলেই যে এভাবে জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়েছে আমরা কখনোই বুঝতে পারিনি বা কোনো ধরনের আশঙ্কাও করার মতো কিছু ঘটেনি।

শিবুল বলেন, শনিবার (২৫ মার্চ) বেলা ২ টা বা আড়াইটার দিকে বিকট আওয়াজে গোলাগুলি শুরু হয়। আতিয়া মহল বা তার পাশের কোনো ভবন থেকেই গুলিটি তার শরীর ছেদ করেছে বলে অনুমান করেন তিনি।

তিনি বলেন, এখন অনিশ্চয়তার দিন কাটছে। এখানে চিকিৎসা খরচ সরকারই বহন করছে। এরপরও কিছু খরচ হচ্ছে, সেটি বহন করতে পারছি, কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছি। পুরোপুরি সুস্থ হতে পারবো কিনা, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয়।

জমিলাদের (৫০) বাড়িও শিববাড়িতে। হাসপাতালের ৩ তলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বোমায় আহত ভাই সেলিমের দেখাশোনা করছেন তিনি। জমিলা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটবে আমরা কখনো অনুমনাও করিনি। আশেপাশের কয়েকটি গ্রামই এখন মানুষ শূন্য।

শনিবার সেলিম বড় বোনের বাড়ি বেড়াতে আসেন। সন্ধ্যায় ফেরার পথে বোমা বিস্ফোরণে আহত হন এ সিএনজি চালক।

জমিলা বলেন, আমার ভাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। এক প্রতিবেশী এসে জানান সেলিম আহত হয়েছে। সেলিমের ৪ সন্তান ছাড়াও বাবার পরিবারও দেখাশোনা করতে হয়। এখন আমরা সকলেই চিন্তিত। বোমার স্প্লিন্টারে তার পায়ের বেশ কয়েক জায়গায় ক্ষত হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

গোলাপগঞ্জের বারোকোটের খর্দ্দাপাড়ার সালাউদ্দিন (৪৫) এলজিইডির প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। তার দু’পায়ে তিনটি স্প্লিন্টার প্রবেশ করেছে। তবে ক্ষতস্থান না শোকানো পর্যন্ত অপারেশন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

স্প্লিন্টারের আঘাতে বাম পায়ের হাড্ডিও ভেঙে গিয়েছে বলে জানান তার ভাগিনা আবিদ আহমেদ।

সিলেটের এমএজি ওসমানী হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা মানুষরা এখনো উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। জঙ্গিদের বোমা এবং গুলির আঘাত তাদের ঠেলে দিয়েছে এক অনিশ্চয়তার দিকে।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) ভোরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানার খবর পেয়ে অভিযান চালায় অাইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। এরপর থেকেই প্রথমে বাড়ি এবং পরে পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়। জঙ্গিদের আটক এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় অপারেশন টোয়ালাইট। শনিবার সন্ধ্যায় দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে ২ পুলিশসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যসহ ৩২ জন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
এমএন/ওএইচ/

**
যন্ত্রণায় কাতর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ