ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘দাদাকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন শর্ষিনার পীর’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
‘দাদাকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন শর্ষিনার পীর’ শিখা প্রজ্বলনে প্রদীপ প্রজ্বলন করেন মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় প্রজন্মের সন্তানেরা। ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী শামস-উল হকের নাতনি কাজী শামস তাথৈ। দাদার বীরত্বগাথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছেন তিনি। দাদার মরদেহও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শামস-উল হককে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন শর্ষিনার পীর।

রাজধানীর সেগুবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এলে তাথৈ দেখতে পান দাদার স্মৃতিচিহ্ন টুপি, কলমসহ ব্যবহার্য জিনিস।

তাথৈ বলেন, ‘এটা ভেবে কষ্ট পাই যে, আমার মুক্তিযোদ্ধা দাদাকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন যিনি, তিনি ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের সময় স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। পরবর্তীতে এরশাদ তার বৈধতা দিয়েছিলেন’।

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে যখন দেখি, যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা, তখন মুক্তিযোদ্ধার নাতনি হিসেবে সেটি কষ্টের’।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধের ‘তৃতীয় প্রজন্মের ভাবনা’ অনুষ্ঠিত হয়।

তাথৈ এ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘দাদার মরদেহ পাওয়া যায়নি। এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরই দাদাকে দেখার তীর্থস্থান, কবরস্থান’।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ সর্ম্পকে শুধু পাঠ্যবই বা স্কুল নয়, পরিবার থেকেও শিক্ষা দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, আবেগ. সংগ্রামগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

শহীদ চানধন সূরের নাতি আবির সূর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার মধ্য দিয়ে চেয়েছিলো, এই জাতির লালন সত্ত্বাকে মুছে দিতে। সেই সত্ত্বাকে আমাদের ধারণ করতে হবে’।

তিনি বলেন, ‘আমার ঠাকুরদা ও  তার ভাইকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়। বাবার পিসিদের হত্যা করা হয়। আমার ঠাকুরমা ও বাবা এরপর পরিবারের অন্যদের নিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান মা-ছেলে। অন্য ৭ ভাই-বোনের দ্বায়িত্ব নিয়েছিলেন বাবা। এ সংগ্রামের কথাগুলো আমাদের এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে’।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী বলেন, ২৫ মার্চের রাত বাংলাদেশের জন্যে এক বিভীষিকাময় রাত। পাকিস্তানিরা এমন এক নৃশংস গণহত্যা চালায় যে, বাংলাদেশ রুখে দাড়াতে বাধ্য হয়। জাতীয় সংসদে এ দিনটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করায় সাধুবাদ জানান তিনি।

জাদুঘরের এই ট্রাস্টি বলেন, ‘দেশে এখন এক শকুনের হামলা হচ্ছে। তবে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ বাঙালির চরিত্র নয়। বাঙালির চরিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম. শাহ আব্দুল করিম আর শামসুর রাহমান। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী হওয়ার উপদেশ দেন তিনি।

সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গনে শিখা প্রজ্বলনে প্রদীপ প্রজ্বলন করেন মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় প্রজন্মের সন্তানেরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
এমএন/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।