ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এখনও অপূর্ণ জাতীয় স্মৃতিসৌধ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
এখনও অপূর্ণ জাতীয় স্মৃতিসৌধ! এখনও অপূর্ণ জাতীয় স্মৃতিসৌধ!-ছবি: বাংলানিউজ

আশুলিয়া, সাভার: ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে প্রাণ হারানো ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। কিন্তু স্মৃতিসৌধটি আজো রয়ে গেছে অপূর্ণ। সাতটি স্তম্ভ ও গণকবর ছাড়া এখানে নেই স্বাধীনতার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য স্মারক। বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পূর্ণতা পায়নি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্মৃতিসৌধটি।

এ-নিয়ে হতাশা আছে অনেকের মনে। জাতীয় স্মৃতিসৌধের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অপূর্ণতা থাকাকে মেনে নিতে পারছেন না তারা।

তাদের বক্তব্য, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন জাতীয় স্মৃতিসৌধটি ৪৫ বছর পরেও পায়নি এর পূর্ণাঙ্গ রূপ।

ঢাকার অদূরে সাভারের নবীনগরে ১০৮ একর জায়গার উপর নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এর আগে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবর রহমান স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে স্থপতি সৈয়দ মঈনুল ইসলামের নকশায় নির্মাণকাজ শুরু করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থাপত্য অধিদপ্তর।

এটি নির্মিত হয় তিনটি ধাপে। প্রথম পর্যায়ে ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভূমি সংগ্রহ ও প্রকল্পের সড়ক নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকায় গণ-কবর, হেলিপ্যাড, পার্কিং-এর জায়গা, পেভমেন্টসহ বেশ কয়েকটি নির্মাণকাজ করা হয়। সবশেষে তৃতীয় ধাপে এসে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভসহ কৃত্রিম লেক, পাশের সবুজ অঙ্গন, ক্যাফেটারিয়া ও হাউজিং ব্যবস্থার নির্মাণে ব্যয় করা হয় ।

১৯৮৮ সালে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এর কাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়। কিন্তু সৈয়দ মঈনুল ইসলামের আদি নকশা ও পরে স্থাপত্য অধিদপ্তরের নেওয়া প্রকল্প এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থাপত্য অধিদপ্তরের নেওয়া প্রকল্পে সৌধ-এলাকায় একটি অগ্নিশিখা, দুটি ম্যুরাল, একটি জাদুঘর, একটি গ্রন্থাগার, একটি ফ্লাওয়ার শপ এবং অডিও ভিজুয়ালকেন্দ্র স্থাপনের কথা ছিল। এছাড়াও ছিল আরো কিছু পরিকল্পনা। এখনও অপূর্ণ জাতীয় স্মৃতিসৌধ!-ছবি: বাংলানিউজবর্তমানে আছে সাতটি স্তম্ভ, ১০টি গণকবর, লেক, উন্মুক্ত মঞ্চ, ভিআইপি লাউঞ্জ, মসজিদ, শহীদবেদীসহ কয়েকশ প্রকারের গাছপালা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকে ঢুকতে চোখে পড়বে একটি নকশার প্রতিচ্ছবি। সে অনুযায়ী কিছু কিছু কাজ করা হলেও কিছু কাজ এখনো রয়ে গেছে অসমাপ্ত। অনেক স্থাপনার কাজ শেষ হলেও শুরু হয়নি কার্যক্রম। এছাড়া শহীদবেদীর উঁচু স্থানে একটি অনির্বাণ শিখা স্থাপনের জন্য জায়গা রাখা হলেও তা এখনও বসেনি। জাদুঘরের ভবন স্থাপন করা হলেও শুরু হয়নি কার্যক্রম। স্বাধীনতার স্মারক দুটি ম্যুরাল-দেয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও একটি দেয়াল তুলেই দায় সেরেছে স্থাপত্য অধিদপ্তর। তাতেও বসানো হয়নি কোনো ম্যুরাল। উদ্যোগ নেই দ্বিতীয় ম্যুরাল-দেয়াল তোলার কাজের। সাতটি স্তম্ভকে সাদা মার্বেলপাথর (মর্মর পাথর) দিয়ে মোড়ানোর ইচ্ছা ছিল স্মৃতিসৌধের নকশা প্রণেতা স্থপতি সৈয়দ মঈনুল ইসলামের। তাঁর ইচ্ছার কোনো বহির্প্রকাশ ঘটেনি সৌধে।

১৯৭১ সালে ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামীলীগের জনসভার সেচ্ছাসেবক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মোহাম্মদ হামিদ রঞ্জু । বাংলানিউজকে তিনি নিজের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার স্মারক-স্থানটি এখনও রয়ে গেছে অসম্পূর্ণ। স্মৃতিস্তম্ভ ও দশটি গণকবর ছাড়া আর কোনো নিদর্শন নেই।

খন্দকার মোহাম্মদ হামিদ রঞ্জু সখেদে আরও বলেন, মানুষ এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তবে কি কারণে জানান, এ বিষয়ে নতুন প্রজন্মের অনেকের কোনো ধারণাই নেই। এটা নতুন প্রজন্মের দোষ নয়। তাদের জানানোর জন্য স্মৃতিসৌধ এলাকায় ব্যবস্থা রাখা উচিত। যারা দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে প্রাণ দিয়েছে তাদের বিষয়ে জানানো উচিত। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে স্মৃতিসৌধের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজটি বঙ্গবন্ধু শেষ করে যেতে পারেননি, সেই কাজটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে শেষ করা উচিত। এই ১০৮ একর জায়গায় অনেক কিছু বাকি রয়ে গেছে। অপূর্ণ কাজগুলো অতি দ্রুত সম্পূর্ণ করা দরকার। তাহলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকাটি পূর্ণতা পাবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল বা একটি বৃহদাকার প্রতিকৃতিও এখানে নেই। কেন নেই?

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু বকর সিদ্দিক জানান, স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণ করতে যাওয়াদের অনেকেই জানেন না স্মৃতিসৌধ কেন, এটি স্থাপনের কারণ কি! তাদের জানানোর দরকার রয়েছে। শুধু সাতটি স্তম্ভ ও আর গণকবরই শেষ কথা নয়। এমন একটি জায়গার অপূর্ণতা মেনে নেওয়া যায় না।
এখনও অপূর্ণ জাতীয় স্মৃতিসৌধ!-ছবি: বাংলানিউজজাতীয় স্মৃতিসৌধের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান তার খেদের কথা জানাতে ভোলেননি।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি নিজে অনেকবার দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেছি স্মৃতিসৌধকে পূর্ণতা দেওয়ার আর্জি নিয়ে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অনেক বিদেশি এখানে আসেন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু তারা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। এখানে অনেক কিছুরই অপূর্ণতা রয়ে গেছে। অদৃশ্য কারণে স্মৃতিসৌধটি পূর্ণতা পাচ্ছে না। তবে চেষ্টায় রয়েছি অপূর্ণ কাজগুলো শেষ করার। যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয় তা দিয়ে এত কাজ করা সম্ভব নয়।


তিনি আরও বলেন, দুটি ম্যুরাল দেয়াল স্থাপনের কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র একটি। যেটি হয়েছে সেটিতেও নেই কোনো ম্যুরাল। শিখা অনির্বাণের জন্য জায়গা প্রস্তুত করা হলেও গ্যাস সংযোগ না দেয়ায় এর কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আমরা লাইব্রেরির জন্য জায়গা রাখা হয়েছে ভবন নির্মাণ হয়নি। আবার ভবন থাকলেও মিউজিয়ামটিকে শুরু করা নিয়ে বার বার ধাক্কা খেতে হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।