ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

যক্ষা বিষয়ক সচেতনতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
যক্ষা বিষয়ক সচেতনতা

যক্ষা বা টিবি একটি বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগ। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামের একটি জীবাণু এ রোগের জন্য দায়ী। এ জীবাণু মূলত ফুসফুসকে আক্রমণ করে। কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে এটি একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। 

যক্ষায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১০ শতাংশ রোগীর সক্রিয় যক্ষা হতে পারে। এইডস রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা না থাকায়, যক্ষায় দ্রুত মারা যান।

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে যক্ষার প্রাদুর্ভাব বেশি। ভারতীয় উপমহাদেশে যক্ষার প্রকোপ বেশি।

ফুসফুস ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও যক্ষা হতে পারে। একে বলা হয় অফুসফুসীয় যক্ষা। যেমন- কিডনি, মূত্রথলি, মস্তিস্ক, মেরুদণ্ড, লিভার, ত্বক, খাদ্যনালী ইত্যাদি। ফুসফুসের যক্ষা হলে কাশি হবে কিন্তু ফুসফুস ছাড়া অন্যান্য অঙ্গে যক্ষা হলে কাশি নাও হতে পারে।  

কিডনি ও মূত্রথলির যক্ষায় প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যায়, মস্তিস্কের যক্ষায় মাথা ব্যাথা হয় ও প্রচণ্ড জ্বর হতে পারে, মেরুদণ্ডের যক্ষায় পিঠ বা কোমর ব্যাথা হয়, হেপাটিক (লিভার) যক্ষায় পেটের উপরের অংশে ব্যাথা হতে পারে, ত্বকের যক্ষায় ক্ষত সহজে শুকায় না, খাদ্যনালীর যক্ষায় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। সবক্ষেত্রেই সাধারণত রোগীর ওজন কমে যায় এবং যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে রোগী ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ধাবিত হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, হৃদপিণ্ডে কখনও যক্ষা হয় না।  

শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে যক্ষার জীবাণু প্রবেশ করার পর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু, যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি তাদের যক্ষা হয় না। যক্ষার জীবাণু শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। যক্ষার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার ২ বছরের মধ্যে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।  

তবে, যক্ষার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পর বছরের পর বছর সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। এ সময় তারা সংক্রমণ করে না। বয়স বা অন্য কোনো রোগ বা মদ্যপানের কারণে বাহকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে যক্ষার জীবাণু সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।  

যক্ষাকে আগে বলা হতো ‘ক্ষয় রোগ’। এ রোগে রোগী ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতো ও ওজন কমে একসময় মারা যেতো। যক্ষা গরু থেকে মানুষে পরিবাহিত হতে পারে। বহু আগে গরুর দুধ কাঁচা খাওয়ার প্রচলন ছিল বলে যক্ষা রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হতো। ধূমপানের কারণে যক্ষা হয় না। তবে ধুমপানের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় বলে যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

যক্ষা ২ ধরনের- (১) সুপ্ত যক্ষা (২) সক্রিয় যক্ষা। এছাড়াও চিকিৎসার সুবিধার জন্য আরও ২টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। (ক) ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষা (খ) মিলিয়ারী যক্ষা।

সুপ্ত যক্ষা
শরীরে যক্ষার জীবাণু প্রবেশ করলেও বাহককে আক্রান্ত না করলে একে বলা হয় সুপ্ত যক্ষা। বছরের পর বছর যক্ষার জীবাণু শরীরে সুপ্ত অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে।  

সক্রিয় যক্ষা
শরীরে যক্ষার জীবাণু প্রবেশের পর ওই ব্যক্তির যক্ষার উপসর্গ দেখা দেওয়াকে বলে সক্রিয় যক্ষা।  

ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষা
যক্ষা রোগে ব্যবহৃত ওষুধগুলো যদি যক্ষার জীবাণুকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয় তখন তাকে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষা বলা হয়। এর কারণগুলো হলো- (১) অপর্যাপ্ত চিকিৎসা গ্রহণ (২) ভুল ওষুধ সেবন (৩) চিকিৎসার কোর্স সম্পূর্ণ না করা।

মিলিয়ারি যক্ষা
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে একই সঙ্গে যক্ষায় আক্রান্ত হওয়াকে বলে মিলিয়ারী যক্ষা।  

যক্ষা রোগের লক্ষণ
(ক) ৩ সপ্তাহের বেশি কাশি (খ) কাশির সঙ্গে প্রচুর কফ অথবা রক্ত আসা (গ) বুকে ব্যথা (ঘ) ওজন কমে যাওয়া (ঙ) জ্বরজ্বর ভাব থাকা (চ) রাতে ঘাম হওয়া (ছ) ক্লান্তি লাগা (জ) মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া

রোগ নির্ণয় (টেস্ট)
 (১) বুকের এক্স-রে (২) কফ পরীক্ষা (৩) টিউবারকুলিন টেস্ট (৪) টিস্যু বায়োপসী

চিকিৎসা
যক্ষার ওষুধ সাধারণত ৬-৯ মাস পর্যন্ত খেতে হয়। এমনকি প্রয়োজনে ১ বছর পর্যন্ত খাওয়া লাগতে পারে। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে যক্ষার চিকিৎসা হয় না। তবে এর জন্য বিশেষ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আছে। যেমন- (১) রিফামপিসিন (২) আইসোনিয়াজাইড (৩) পাইরাজিনামাইড (৪) ইথামবিউটাল (৫) স্ট্রেপ্টোমাইসিন।  

সাধারণত চিকিৎসার প্রথম ২ মাস ৪টি ওষুধ রোগীর ওজন অনুসারে নির্দিষ্ট ডোজে খাওয়ানো হয়। পরবর্তীতে ৪ বা ৭ মাস ২টি ওষুধ নির্দিষ্ট ডোজে খাওয়ানো হয়। যক্ষার ওষুধ একদিনও বাদ দেওয়া যায় না, নিয়ম মেনে প্রতিদিন সকালে নাস্তার আগে খালি পেটে খেতে হয়। ২ সপ্তাহের বেশি ওষুধ খাওয়ার পর একজন থেকে আরেকজনে যক্ষা ছড়ায় না।

বিসিজি টিকা
শিশুর জন্মের পরপরই বিসিজি টিকা দিলে পরবর্তী জীবনে যক্ষা রোগের সম্ভাবনা একদম কমে যায়।  

কখনও কখনও যক্ষায় আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষায় যক্ষা ধরা পড়ে না। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে যক্ষার ওষুধ খওয়া যেতে পারে। এতে কোন ক্ষতি হয়না। যক্ষার ওষুধ সেবনের ফলে কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন- বমিবমি ভাব অথবা বমি, লাল বা কমলা রঙের প্রস্রাব ইত্যাদি। এতে ভয়ের কিছু নেই। ওষুধের কোর্স শেষ হলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো এমনিতেই চলে যাবে। বাংলাদেশের সব স্তরের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কিছু এনজিওতে বিনামূল্যে যক্ষার পরীক্ষা করানো যায় এবং ওষুধ পাওয়া যায়।  

যক্ষা প্রতিরোধ করার উপায়
জন্মের পরপর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করা, যেখানে-সেখানে থুথু না ফেলা, যক্ষা রোগীর কফ-থুথু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা।

আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক বা ছাত্ররা বিদেশ যাওয়ার সময় যে পরীক্ষাগুলো করানো হয় তার মধ্যে যক্ষা নির্ণয়ের জন্য বুকের এক্স-রে অন্যতম। বুকের এক্স-রে তে যক্ষা ধরা পরলে বিদেশ যাত্রা বাতিল করা হয়। তাই বিদেশ যাত্রার জন্য পরীক্ষার আগেই নিজেরাই বুকের এক্স-রে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হউন যক্ষা আছে কিনা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
জেডএস

ডা. এম. মঞ্জুর আহমেদ
এমবিবিএস (সিইউ); পিজিটি (সার্জারি); সিসিডি (বারডেম); ইডিসি (বারডেম)
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি স্বীকৃত 
ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিক ফুট চিকিৎসক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।