ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শেষটি নিজামীর, প্রথম ফাঁসি অজানা

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
শেষটি নিজামীর, প্রথম ফাঁসি অজানা পুরান কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ/ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ২২৮ বছর আগে স্থাপিত  ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এখন ইতিহাসের অংশ। গত বছর থেকে কেরানীগঞ্জের নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়েছে কারাগারটি।

পুরনো এ কারাগারকে ঘিরে রয়েছে কতো শত ঘটনা। কোনো কোনোটি আবার ভয়ানক লোমহর্ষক  আর পৈশাচিক বটে।

যেমন ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এই কারাগারেই খন্দকার মুশতাকের ইঙ্গিতে জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারটির ইতিহাসে যুক্ত হয় এক কলঙ্কজনক ঘৃণ্য অধ্যায়।  

মোগল সুবাদার ইব্রাহিম খান চকবাজারে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে দুর্গটি ঢাকার নায়েবে নাজিমের আবাসস্থলে পরিণত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ১৭৮৮ সালে দুর্গের ভেতরে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণ করা হয়।

পরে ওই দুর্গটিকেই কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়।

কারাগার প্রতিষ্ঠার পরপরই সেখানে তৈরি করা হয় ফাঁসির মঞ্চ, যার বয়স ২২৮ বছর। সময়ের বিবর্তনে পুরনো কারাগারের বিভিন্ন কিছুর সঙ্গে ফাঁসির মঞ্চটিকেও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

তবে পুরনো কারাগারের ফাঁসির মঞ্চটিতে ২২৮ বছরে ঠিক কতোজন আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসেব বা তালিকা নেই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর করিব বাংলানিউজকে বলেন, ‘কারাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ফাঁসির মঞ্চে কতোজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিলের ব্যাপার’।

‘কারাগারে থাকা ২২৮ বছরের নথিপত্র ঘেঁটে বলা যাবে, তবে বিষয়টি সময়াসাপেক্ষ’- যোগ করেন তিনি।  

তবে, শেষ ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে গত বছরের ১১ মে। সে রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতনেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকরের পর এ মঞ্চে আর কোনো ফাঁসি কার্যকর করা হয়নি।

এর পরপরই শুরু হয় কারাগার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া। আর ফাঁসির মঞ্চটিও এখন ইতিহাসের অংশ।

কারাফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে একটু সামনে হাতের বাঁয়ে লোহার গেটের পর দুই পাশে দু’টি সেল। ডানে রজনীগন্ধা সেল (ফাঁসির সেল)। এখানকার ৮টি কনডেম সেলে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের রাখা হতো।

রজনীগন্ধা সেলের বাঁ পাশের সরু গলি পার হলেই ফাঁসির মঞ্চ। সামনে বেশ খানিকটা খালি জায়গা।  

বুধবার (২২ মার্চ) সকালে পুরনো কারাগারের একমাত্র ফাঁসির মঞ্চে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মঞ্চটি খোলা আকাশের নিচে। একসঙ্গে দু’জনের ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে দু’টি পাটাতন। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৮ ফুট, প্রস্থ ৫ ফুট ও গভীরতা ৮ ফুট। দু’টি পাটাতনের জন্য রয়েছে একটি লিভার। এর ঠিক মাঝ বরাবর নিচে আছে একটি ছোট দরজা। ফাঁসি দেওয়ার পর সেখান দিয়ে মরদেহ বের করা হতো। এর ওপরে সাদা বোর্ডে লাল কালি দিয়ে লেখা, ‘ফাঁসির মঞ্চ’। মঞ্চের দুই পাশ দিয়ে ওঠা-নামার জন্য রয়েছে ঢালু জায়গা।


এ মঞ্চেই কার্যকর করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ খুনি ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিনের ফাঁসি।

শীর্ষ ৫ যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে এখানে।

দেশের আলোচিত খুনি এরশাদ শিকদারেরও ফাঁসি কার্যকর হয়েছে এ মঞ্চেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭/ আপডেট ১২১৬ ঘণ্টা
এসজেএ/এএসআর/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।