ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঝুঁকির মুখে সাতক্ষীরার ২১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৭
ঝুঁকির মুখে সাতক্ষীরার ২১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ! ভাঙ্গতে থাকা বেড়িবাঁধের পাশে এক উদ্বিগ্ন প্রবীণ, ছবি: বাংলানিউজ

সাতক্ষীরা: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরার প্রায় ২১০ কিলোমিটার উপকূলরক্ষা বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে আসন্ন দুর্যোগ মৌসুমে এসব বেড়িবাধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে গোটা এলাকা। দেখা দিতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন এবং আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, খাজরা, আনুলিয়া ও বড়দল ইউনিয়ন ঘিরে প্রবাহিত কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী। আর দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা ও কোমরপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

এসব এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে কোথাও কোথাও আর মাত্র এক-দেড় হাত অবশিষ্ট রয়েছে। যা যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে গোটা এলাকা।

খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, জেলার ৭৯৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামের শিক্ষক অসীম কুমার মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি, পূর্বপাতাখালী, চাউলখোলা ও বন্যতলায় বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ওইসব পয়েন্টে বেড়িবাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আতাউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তার ইউনিয়নের চারদিক কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীবেষ্টিত। অন্তত ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

শ্যামনগর উপজেলার আরেকটি দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা। গাবুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাকছুদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, আইলা ও সিডরে বিধ্বস্ত গাবুরার নাপিতখালী, লেবুবুনিয়া, কালিবাড়িসহ তার আশপাশের এলাকায় বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো নজর নেই। বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কখনও খোঁজখবর নেয় না।

জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তার ইউনিয়নের হিজলিয়া, কোলা, শুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, দয়ারঘাট, মনিপুর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে আর এক-দুই হাত অবশিষ্ট আছে। এবছর বেড়িবাঁধ ভেঙে তার ইউনিয়ন অন্তত চারবার প্লাবিত হয়েছে।

‘বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার বাঁধ ভাঙলে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ তলিয়ে যায়। অবকাঠামো নাজুক হয়ে পড়ে। বাঁধ ভাঙলে সংস্কার করা হয়, ভাঙার আগে বার বার বলা সত্ত্বেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। তার ইউনিয়নের অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

ঠিক একই অবস্থা আনুলিয়া, বড়দল, খাজরা ইউনিয়নেও। আর দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা ও কোমরপুর এলাকায় সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের অবস্থাও একই রকম।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিএম আব্দুল মোমিন বাংলানিউজকে বলেন, পাউবো-১ এর আওতায় ৩৭৭ দশমিক ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এরই মধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে নোটশিট পাঠিয়েছি। কিন্তু আপাতত কোনো বরাদ্দ নেই।

তিনি বলেন, সাধারণত মে মাসে দুর্যোগ মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবার তাড়াতাড়ি গরম পড়ে যাওয়ায় এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই দুর্যোগ মৌসুম শুরু হয়ে যাবে। চলবে আগস্টের শেষ পর্যন্ত। তাই বাঁধগুলো সংস্কার করা খুব জরুরি।

অপরদিকে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, পাউবো-২ এর আওতায় ৪২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নোটশিট পেশ করার পর সম্প্রতি ২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত টেন্ডার আহবান করে কাজ শুরু করা হবে। তবে এই অর্থে মাত্র ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫, মার্চ ২২, ২০১৭

জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad