ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

তিস্তাপাড়ে কর্মহীন হাজারো জেলে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
তিস্তাপাড়ে কর্মহীন হাজারো জেলে তিস্তা পাড়ে অলস সময় কাটছে জেলেদের। ছবি: সাগর

লালমনিরহাট: এবারের শুকনা মৌসুমেও বালু চরে পরিণত হয়েছে খরস্রোতা তিস্তা। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি থাকলেও হাজারো জেলে পরিবার কার্যত কর্মহীন। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে জীবন জীবিকার তাগিদে যোগ দিচ্ছেন ভিন্ন পেশায়।

ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এই তিস্তা নদী। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে মিশেছে ব্রহ্মপুত্রে।

৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় প্রতি বছর বর্ষা শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশ অংশে মরা খালে পরিণত হয় তিস্তা। এবছরও তার ব্যত্যয় হয়নি।

ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার তিস্তা অববাহিকার জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেল সেতু, তিস্তা সড়ক সেতু ও নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু যেন প্রহসনমূলকভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে বালুচরের উপর। ব্রিজ থাকলেও পায়ে হেঁটেই নদী পার হচ্ছে অনেকেই। ঢেউহীন তিস্তায় রয়েছে শুধু বালু কণা। গত ক’দিনের হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি প্রাণ ফেরাতে পারেনি তিস্তায়। নদীর বুক জুড়ে জেগে উঠা ধু-ধু বালু চরে লাগানো বিভিন্ন সবজি প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।

তিস্তা নদীতে মাছ আহরণ করে শুটকি ও মাছ বিক্রি করে জীবনযাপন করতেন এ অঞ্চলের জেলেরা। তারাও আজ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ায় তিস্তা পাড়ের মাঝি-মাল্লারাও কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় সামান্য পানিতে মাছ ধরছেন হাফিজ, হযরত, নাজিমসহ প্রায় ২০ জন জেলে। বাংলানিউজকে তারা জানান, তিস্তার বৈরাতী/বৈরালী/বুড়াল মাছ এ অঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি খাবার। মেহমান এলে বাড়ির খাদ্য তালিকায় এ মাছ থাকা চাই ই চাই। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী এলেও খাদ্যের তালিকায় থাকে এ মাছ। অথচ পানির অভাবে তিস্তায় আজ সেই মাছের দেখাই মিলছে না।

জেলেরা বলেন, সারা দিন মাছ ধরে যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার পরিজন চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আগে তিস্তায় মাছ ধরে সারা বছর সংসারের খরচ চলতো।

খেয়াঘাটের মাঝি মাজহারুল আক্ষেপের সুরে বাংলানিউজকে বলেন, পানি নাই নৌকা কোথায় চালাই, সবাই হেঁটেই পার হচ্ছে তিস্তা।
 
তিস্তার তীরবর্তী খুনিয়াগাছ এলাকার কৃষক হবিবর, নজির ও আফাজ বাংলানিউজকে বলেন, তিস্তা পানি শূন্য হওয়ায় ভুট্টা ও আলুসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতে দূর থেকে প্রতিদিন পানি সেচ দিতে হচ্ছে। তারপরও ফসলের ক্ষেত পানির অভাবে মরে যাচ্ছে।
 
সব কষ্ট যেন তাদের কপালেই লেখা এমন মন্তব্য করে তিস্তা পাড়ের কৃষাণি লাকী বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষার সময় বন্যায় কষ্ট, আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ফসল শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কষ্টের পালা যেন আমাদের কপালেই লেখা ছিল।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ এর ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় তিস্তার পানি প্রবাহ অনেক কম। এ বছর সেচ প্রকল্প সচল রাখা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
জেডএম/

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।