ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অটোরিকশায় বাড়তি ভাড়ার মহোৎসব

অন্তু মুজাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
অটোরিকশায় বাড়তি ভাড়ার মহোৎসব যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে সিএনজি অটোরিকশাগুলো

ঢাকা: ব্যস্ততম নগরীতে প্রতিদিনই প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বের হয় সাধারণ মানুষ। তবে প্রয়োজনের তুলনায় গণপরিবহন কম। তার ওপর যানজট। তাই কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে একমাত্র ভরসা সিএনজি চালিত অটোরিকশাই।

তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও জনগণের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে প্রতিনিয়তই বাড়ছে অটোরিকশা চালকদের দাপট। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মহোৎসব।


 
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অটোরিকশার নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও তা এখন কাজীর কাগজে। নেই তার বাস্তবায়ন। বিআরটিএ অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটার ৪০ টাকা ও পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা এবং প্রতি এক মিনিট ওয়েটিংয়ের (যাত্রাবিরতি, যানজট ও সিগন্যাল) জন্য দুই টাকা হারে ভাড়া নির্ধারণ করেছে। এছাড়াও মালিকের জমা ৯শ’ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু, মালিকরা তা বাড়িয়ে চালকদের কাছ থেকে ১৬শ’ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
       
বিআরটিএ বলছে, যেসব চালকেরা যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে বিআরটিএ’র অভিযান অব্যাহত আছে। যারা মিটারে চলবে না, বাড়তি ভাড়া আদায় করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, মালিকদের বাড়তি জমা ও রাস্তায় যানজট থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই মিটারে যেতে চান না বলে দাবি করেছেন চালকরা। তাছাড়া মিটারে দূরের যাত্রী না পেলে দিন শেষে জমার টাকা উঠানোই কষ্টকর হয়ে পড়ে বলে অটোরিকশা চালকদের দাবি।
 
সোমবার (২০ মার্চ) সকালে সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত অটোরিকশা চালক সোনাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দিনশেষে গাড়ির মালিককে এক হাজার টাকা জমা দিতে হয়। রাস্তায় যানজট থাকায় একবার যাত্রী নিয়ে গেলে অর্ধেকটা দিন ফুরিয়ে যায়। মিটারে গেলে জমার টাকা ওঠে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই কন্ট্রাক্ট করে যাত্রী উঠাই। আবার দূরের পথে মিটারে যেতে চাইলেও যাত্রীরা যেতে চায় না।  
          
সায়েদাবাদ থেকে উত্তরা যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশা খুঁজছেন তারিক আজিজ ও সরোয়ার। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও যেতে পারছেন না তারা। জিজ্ঞেস করতেই ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, দেখছেন না ভাই। কেউ মিটারে যেতে চায় ‍না। আমার সঙ্গে প্রথমে ৪৫০ টাকা দর করেছে। এখন বলছে ২০ টাকা বেশি দিয়েন। তারা সব সময় অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।
 
শাহবাগ মোড়ে সিএনজি খুঁজতে খুঁজতে একজন বলে উঠলো, ভাই কি আর করবো। তারা জানে যে, সিএনজি ছাড়া আমরা যেতে পারবো না। সেজন্য সামান্য বৃষ্টিতেই তাদের আসল চেহারা ফুটে উঠেছে। ১৫০ টাকার ভাড়া ২৫০ টাকা হয়ে গেছে। ৩০০ টাকার ভাড়া দাবি করছে ৫০০ টাকা। আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি।
 
প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার কথা তুলে মেডিকেল শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, প্রশাসনের সামনে এসব অনিয়ম চলছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ নিজেই চাঁদা ওঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আইনের রক্ষক যারা তাদের হাতেই আইন নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। আমাদের বলার কিছুই নেই। আমরা তো ‍আমজনতা।
 
বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত নিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮০টি। যার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় রয়েছে ৯ হাজার ২১টি।

অন্যদিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংখ্যা ১৪ হাজারেরও অধিক। নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব অটোরিকশা।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বরাবরই এসব চালকদের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি। বিআরটিএ বলছে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে তা দৃশ্যমান নয়। আজকে সাধারণ জনগণ পরিবহন মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এবং যাত্রী স্বার্থ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

সম্প্রতি পরিবহন আইন বিষয়ক যে মিটিং হয়েছে সেখানে আমরা উপস্থিত হয়ে যাত্রী স্বার্থ সুরক্ষায় বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
এএম/এসআরএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ