ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাঁওতাল কাণ্ডে স্থানীয় প্রশাসন-রাজনৈতিক নেতারা জড়িত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
সাঁওতাল কাণ্ডে স্থানীয় প্রশাসন-রাজনৈতিক নেতারা জড়িত বক্তব্যকালে কাজী রিয়াজুল হক, ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলা রাষ্ট্রীয় মদদ নয়, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিরা জড়িত বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

সোমবার (১৯ মার্চ) বিকেলে ফার্মগেটে একটি জাতীয় দৈনিকের ভবনে ‘সরকারের প্রতিশ্রুতি ও আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুর বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, গাইবান্ধা সাঁওতালদের ওপর হামলা রাষ্ট্রীয় মদদে হয়নি।

এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিরা জড়িত ছিল। কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই এই হামলা চালানো হয়েছিলো।

তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সমতল ও সাঁওতালরা একই সাথে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। কিন্তু এখন কেন এই বিভাজন। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, জাতি, ধর্ম-বর্ণ নিবিশেষে একত্রে কাজ করতে হবে। আমরা সংঘর্ষে যেন জড়িয়ে না পড়ি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

‘ভূমি অধিকার মানুষের সহজাত অধিকার। কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ভূমিতে বাস করে তবে তার সেই জমির প্রতি মালিকানা জন্মায়। মানবাধিকার কমিশন আপনাদের পাশে আছে। আপনাদের সাহস সঞ্চয় করতে হবে এবং সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে’- সাঁওতালদের উদ্দেশে এ কথা বলেন রিয়াজুল হক।

সভায় ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ভিকটিম সার্পোট সেন্টার) ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা খুললেই চোখে পড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা। নারী ও সহিংসতা যেন একই সূত্রে গাঁথা। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
 
তিনি বলেন, জীবন-জীবিকা ও লেখাপড়ার প্রয়োজনে অনেক নারী রাজধানীতে বাস করছেন। আপনাদের পাশেই আছে ভিকটিম সার্পোট সেন্টার। আমরা আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা কোনো অপরাধীকে ধরে সব প্রক্রিয়া শেষে যখন কোর্টে পাঠাই। তখন দেখা যায়, কোনো না কোনোভাবে অপরাধী জামিনে মুক্তি পায়্ এছাড়া  ভিকটিমকে হুমকিও দিয়ে থাকে।

আদিবাসী নারীদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষা ও সংস্কৃতিগত সমস্যার কারণে আদিবাসী নারীরা সমস্যা হলে ভিকটিম সার্পোট সেন্টারে যায় না। এছাড়া তারা আইন ও আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন নয়। নারী ও শিশুদের জন্য আইন থাকলেও আইনেরর যথাযথ প্রয়োগ নেই। যথাযথ প্রয়োগ না থাকার করণেই প্রতিনিয়ত নারী ও শিশু নির্যাতন বাড়ছে।

সভায় সংসদ সদস্য শিরিন আকতার বলেন, আদিবাসী নারীসহ সব নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানে যে সব নীতিমালা রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে।

সভায় মহিলা পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাখি দাস বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পাশাপাশি হাত ধরে চলে। নাসিরনগর ও গবিন্দগঞ্জের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তি হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ঘরে, বাইরে ও কর্মস্থলে নারীরা যে হররানির শিকার হচ্ছে, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

অনুষ্ঠানে সঞ্চলনের দায়িত্ব পালন করেন-তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি সুলেখা মরং।

গত বছরের ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় চিনিকলের জমি উদ্ধারকে কেন্দ্র করে সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে শ্যামল হেমরম ও মঙ্গল মার্ডী নিহত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
আরএটি/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।