ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বৃষ্টি এখানে রোমান্টিক নয় ....

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০১ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
বৃষ্টি এখানে রোমান্টিক নয় .... আগুনে পোড়া কড়াইল বস্তিতে ফের ঘর তোলার ব্যস্ততা। ছবি: রানা

ঢাকা: সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ মেঘলা। রাতের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির শীতলতা বজায় রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শহুরে মধ্যবিত্তের মন্তব্যে রোমান্টিকতা ছুঁয়ে যায়। তবে এই শহরের আকাশের নিচে সবার জন্য এই বৃষ্টি রোমান্টিক নয়। মাত্র চার দিন আগে অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া ছাদহীন কড়াইলবাসীর কাছে এই বৃষ্টি যেন সাক্ষাৎ অভিশাপ।

পুড়ে যাওয়া ঘর আবারো দাঁড় করাচ্ছে বস্তিবাসী। রাতে এখনো আশপাশের বস্তিতে বাস করে তরা।

কারণ রাতের হঠাৎ বৃষ্টিতে দৌড়ে ছুটতে হয় কোন টিনের নিচে। সারা রাত কাটে নির্ঘুম। বৃষ্টি থামার অপেক্ষা। কিন্তু রাত পোহালে আর আলোতে ঘুমানো যায় না। নেমে পড়তে হয় কাজে। কাঁথা গায়ে জড়িয়ে শীতল আবহাওয়ায় রাত কাটানো সেখানে বিলাসিতার চেয়ে বেশি।

সকাল থেকেই পুরনো জঞ্জাল সরানোর কাজ শুরু করেন কড়াইল বস্তিবাসী। এখানে নারী-পুরুষের কাজের ভাগ সমানে সমান। পুড়ে যাওয়া আর্থিক ক্ষতি সারিয়ে উঠতে ভোর হতেই বের হয়ে যান অনেকে। কেউ বাসায় গৃহস্থালির কাজ করতে, আবার কেউ রিকশা নিয়ে। সংসারের একজন থাকে ঘর ওঠানোর কাজ করতে। পুড়ে যাওয়া স্থান পরিষ্কার, নতুন বাঁশ বসানো, প্লাস্টিক টানানো, বেলা ১২টা থেকেই খাবারের অপেক্ষা। এলাকার ওয়ার্ড অফিস থেকে বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে বিতরণ করা হয় খাবার। আগুনে পোাড় কড়াইল বস্তিতে আপনমনে খেলছে এক শিশু।  ছবি: রানা

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বৃষ্টি নামে। প্রথমে ঝিম ঝিম বৃষ্টি হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। খোলা আকাশের নিচে খাবারের অপেক্ষায় বসে থাকা বস্তিবাসী ভিজতে থাকে। আবার উঠে চলে যেতেও পারে না। পাছে যদি খাবারটাই না পাওয়া যায়! এই বস্তিতে চৈত্রের এই বৃষ্টি রোমান্টিক হয় না। বরং জীবন যুদ্ধকে আরো কঠিন করে তোলে।

বনানীর একটি অফিসে বুয়া'র (গৃহশ্রমিক) কাজ করেন মধ্যবয়সী রাহেলা বেগম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তিন সন্তান এবং স্বামীসহ বস্তির ক-ব্লকে থাকেন তিনি। ঘর পুড়ে যাওয়ার পর থেকে বস্তির বনানী মুখে এক আত্মীয়ের ঘরে বাস করছেন। স্বামী রিকশার গ্যারেজেই ঘুমান। গত কয়েকদিন ধরে অফিসে থেকে ছুটি নিয়েছেন তিনি।

বাংলানিউজকে বলেন, এই সময়টায় সময় দিতে হয়। অনেক সময় জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়। আবার নতুন ঘর ওঠানোর সময় জায়গা বদল হয়ে যেতে পারে, দখল হয়ে যেতে পারে।

গুলশানে রিকশা চালান সালাউদ্দিন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার বৌ বাসায় কাজ করে। না গেলে কাজে রাখবো না। তাই আমি ঘর উঠানোর কাজ করি। তবে আজকে আর বৃষ্টিতে কাজ করা যাচ্ছে না। প্রতিরাতেও বৃষ্টি হচ্ছে। মাটি ভিজে কাদা হয়ে গেছে। হাঁটাচলাও করা যাচ্ছে না এইখানে। আগুনে পাড়া কড়াইল বস্তি।  ছবি: রানা

গতরাতের বৃষ্টিতে কাদা আর পানিতে মাখামাখি হয়ে আছে বস্তির পোড়া এলাকা। পাশের ঝিলের ময়লা পানির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে প্রবল।

সালাউদ্দিন বলেন, বোতলে পানি জমিয়ে রাখি। ওয়াসার পানি দিয়ে যায় এখানে। এনজিও’র ডাক্তাররা এসে বলে দিয়েছেন, যেন বাইরের পানি না খাই।

এই বৃষ্টিতে এক বিভীষিকাময় অবস্থা বিরাজ করছে কড়াইল বস্তির পুড়ে যাওয়া এলাকায়। আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে লিপ্ত মানুষগুলোকে বাধা দিচ্ছে বৃষ্টি। সেখানে আকাশের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি কখনোই রোমান্টিক হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ