ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সড়ক তো নয়, যেন খানাখন্দ ভরা নর্দমা!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
সড়ক তো নয়, যেন খানাখন্দ ভরা নর্দমা! সোনাগাজীর আভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল দশা। ছবি-ডালিম হাজারী/বাংলানিউজ

ফেনী: সোনাগাজী। এ উপজেলা ও মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলে তৈরি হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ স্পেশাল ইকোনোমিক জোন। সরকারের পরিকল্পনার আলোকে এখানে নির্মাণ করা হবে বিমানবন্দর, নৌবন্দরসহ নানা অবকাঠামো।

এ উপজেলার ফেনী নদীর ওপর দিয়ে তৈরি হচ্ছে নোয়াখালী-ফেনী সংযোগ সেতু। নানা কারণে এ উপজেলার রয়েছে অপার সম্ভাবনা।

কিন্তু এতো-এতো সম্ভাবনার পরও এ জনপদের সড়ক দিয়ে যাত্রা করলে মনে হবে নরকে এসে পড়েছেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাগুলো আর রাস্তা থাকে না। হয়ে ওঠে হয় নর্দমা।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না করায় আন্ত:উপজেলা ও ইউনিয়নের অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও পথচারীরা। সোনাগাজীর আভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল দশা ছবি-ডালিম হাজারী/বাংলানিউজ

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনাগাজী উপজেলায় ৬ শত ৩১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ৪ শত ১১ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। ১ শত ৯২ কিলোমিটার পাকা সড়ক। আর ২৮ কিলোমিটার ব্রিক সোলিং করা সড়ক।

উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কের মধ্যে ৩৭ কিলোমিটার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে, বাকি ৫ শত ৯৪ কিলোমিটার সড়ক এলজিইডি’র অধীনে। দীর্ঘদিন সড়কগুলোর সংস্কারকাজ না করায় এসব সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এর মধ্যে ফেনী-৩ আসনের সাংসদ হাজী রহিম উল্যার নিজের যাতায়াতের অন্যতম সড়ক সোনাগাজী-মুহুরী রেগুলেটর সড়কের ৭ কিলোমিটারের বেশির ভাগ অংশই যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ যেন ‘বাতির নিচে অন্ধকার’। সোনাগাজীর আভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল দশা ছবি-ডালিম হাজারী/বাংলানিউজ
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ: ‘এমপি সাহেব এসব দেখার পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ’

এব্যাপারে কথা হয় স্বয়ং এমপির সাথে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘শুধু এ সড়কটি নয়, উপজেলার আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমরা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সড়কগুলো সংস্কারের জন্য চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই এসব সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হবে। ’

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,সবচে’ ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলো হলো সোনাগাজী-মুহুরী রেগুলেটর সড়ক, বখতারমুন্সি-কাজীরহাট সড়ক, সোনাগাজী-ওলামা বাজার সড়ক, ভৈরব চৌধুরীহাট-মতিগঞ্জ সড়ক, সোনাপুর-নবাবপুর সড়ক, সোনাগাজী-বহদ্দারহাট সড়ক, মতিগঞ্জ-ভোরবাজার সড়ক, কুঠিরহাট-চিন্তারপুল সড়ক,কুঠিরহাট আবুবকর সড়ক, ভৈরব চৌধুরী-বেড়ীবাঁধ সড়ক, চরগণেশ জিপি এনামুল হক সড়ক, মোল্লাবাড়ী থেকে মুন্সীবাড়ী সড়ক, হাদীষ্টান থেকে হালিম ডাক্তার পোল সড়ক, নজরুল প্রাইমারি স্কুল থেকে ভূঞাবাড়ী সড়ক ও নূরুল হক ফরায়েজী সড়ক। এসব সড়কের করুণ দশা।

সোনাগাজীর আভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল দশা ছবি-ডালিম হাজারী/বাংলানিউজকথা হয় এসব এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তাদের জবানিতে উঠে আসে সড়ক-দুর্ভোগের চিত্র। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছি। তাই মাত্র দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে জনদুর্ভোগও বেড়ে গেছে। একারণে ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লাগে ১ ঘন্টারও বেশি।

এর উপর নিত্য দুর্ঘটনা তো আছেই। আবসার হোসেন নামের এক বাসিন্দা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আর ঘটে নানা দুর্ঘটনা। কোনোদিন সিএনজি আবার কোনোদিন টমটম উল্টে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ আহত, জখম হচ্ছে।

বেহাল সড়কের কারণে সববেচে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় সময়মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো যায় না।

এব্যাপারে কথা হয় উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের কলেজশিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন লিমনের সাথে। তিনি জানান, সোনাগাজী-মুহুরী রেগুলেটর সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত। একারণে প্রায় সময়ই গর্তে পড়ে যানবাহন বিকল হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।

সড়কের এহেন দশা নিয়ে কথা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম’র সঙ্গে। বাংলানিউজের কাছে তিনি দাবি করেন, ‘এরই মধ্যেই বেশ কয়টি সড়কের সংস্কারকাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকিগুলোর দ্রুত সংস্কারে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, বাজেট পাওয়া যাবে। আর বাজেট পেলেই কাজ শুরু হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
ডিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।