ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রমাণ লোপাট করতেই হোটেল কর্মচারী খুন, মনে করছে পুলিশ 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭
প্রমাণ লোপাট করতেই হোটেল কর্মচারী খুন, মনে করছে পুলিশ  রাজশাহীতে হোটেল কর্মচারী খুন; ছবি-বাংলানিউজ

রাজশাহী: মহানগরীর গণকপাড়ার আল হাসিব প্লাজার প্রথম তলায় রয়েছে মার্কেট। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে উত্তরা ব্যাংকের সাহেব বাজার শাখা। তৃতীয় তলায় একই ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়। আর চতুর্থ তলায় ওই আবাসিক হোটেল। পঞ্চম তলায় ভবন মালিক হাসিবুল ইসলাম মানিক পরিবার নিয়ে থাকেন।

তবে কি একই ভবনে থাকা ব্যাংক ডাকাতির জন্যই ওই হোটেলে উঠেছিল দুর্বৃত্তদের কেউ? যার এমন কোনো কর্মকাণ্ড দেখে ফেলায় প্রমাণ মেটাতে হত্যা করা হয় হোটেল বয় সিরাজুল ইসলামকে।

হ্যাঁ, ঘটনাটি নিয়ে দিনভর নাড়াচাড়া করার পর এখন এমন প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

হতে পারে এই সূত্র ধরেই বেরিয়ে আসতে পারে সিরাজুল হত্যাকারীদের পরিচয়।

সিরাজুলের মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনার ‘ক্লু’ উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিষয়টিই আপাতত সামনে এসেছে পুলিশের। তাই বর্তমানে এই দিকটাই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) একেএম নাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গণকপাড়ার ওই আবাসিক হোটেল বয় সিরাজুলকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে প্রথমে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। হোটেলের ওই কক্ষ থেকে রক্তমাখা ধারালো একটি অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। আঙ্গুলে ছাপ শনাক্তের জন্য তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করা হয়েছে। তালাগুলো মেশিন দিয়ে কাটা। তবে এর ধরণ দেখে অনুমাণ করা যায় হোটেলে নয়, নিচতলার ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনাই ছিল দুর্বৃত্তদের। হয়তো হোটেলের তালা কাটার বিষয়টি দেখে ফেলায় ওই কর্মচারীকে হত্যা করা হয়। এর পর দুর্বৃত্তরা আর ব্যাংক ডাকাতির ঝুঁকি না নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে এটি এখন ধারণামাত্র। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাবে না বলে জানান পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন খাঁন বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার পর নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেল বয় সাজু ও ম্যানেজার রিপন চৌধুরীকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে এই ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওসি জানান, গত ১৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় ব্যবসায়ী পরিচয়ে একজন ব্যক্তি হোটেল আল হাসিবের ৪০৩ নম্বর কক্ষে ওঠেন। হোটেলের রেজিস্ট্রারে তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ বলে উল্লেখ ছিলো। তবে ঘটনার পর হোটেল রেজিস্ট্রার বইয়ের ওই পাতাটি ছেড়া পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে নাম-পরিচয় ও ঠিকানা গোপন করতেই যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা পাতাটি ছিড়ে নিয়ে গেছে।

তবে বর্তমানে পিবিআই, সিআইডি ও বোয়ালিয়া থানা পুলিশ যৌথভাবে এই ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগিরই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা যাবে বলে জানান ওসি।

এর আগে গণকপাড়া এলাকার আল হাসিব আবাসিক হোটেলের ৪০৩ নং কক্ষ থেকে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (৩৬) নামের এক হোটেল বয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

নিহত হোটেল বয় সিরাজুল ইসলাম রাজশাহীর তানোর উপজেলার চান্দুরিয়া গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে। তবে তিনি মহানগরীর আমবাগান এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। ১৭ বছর থেকে সিরাজুল এই হোটেলের কর্মচারী ছিলেন।

মরদেহ উদ্ধারের সময় পুলিশ তার মাথা ও গলায় আঘাতের চিহ্ন পায়। ওই কক্ষের আসবাবপত্রগুলোও এলোমেলো অবস্থায় ছিলো। পরে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে কক্ষে তার মরদেহ ছিলো সেই কক্ষের বোর্ডার পালিয়ে গেছেন।

যাওয়ার সময় হোটেলের রেজিস্ট্রার বই থেকে একটি পাতা ছিড়ে নেয়া হয়। এছাড়া খোয়া গেছে হোটেলের ক্যাশে থাকা ১ হাজার ৪শ’ টাকাও।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭
এসএস/জিপি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad