ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাস নয় যেন মুড়ির টিন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭
বাস নয় যেন মুড়ির টিন! লক্কড় ঝক্কড় বাস। ছবি: মামুন

চান্দনা চৌরাস্তা, গাজীপুর ঘুরে: গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছে ‘বলাকা সার্ভিস’। পুরনো  বাসটির শরীরজুড়ে দগদগে ক্ষত! রঙ উঠে যাওয়ায় নাম্বার প্লেটও ঠাহর করার জো নেই। নির্দেশক বাতিও (ইনডিকেটর) নষ্ট।

কোনো জানালারই কাঁচ অক্ষত নেই। আসনের দশা তো আরো বেহাল।

ঠিক কতদিন আগে লক্কড়-ঝক্কড় বাসটি মেরামত করে রঙের প্রলেপ দেয়া হয়েছিল তাও যেন ভুলে গেছেন চালক।

তবে বাসের চেহারা যেমনই হোক, ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে তারা সরকারি নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কাই করছে না। দফায় দফায় মোবাইল কোর্টও ফিটনেসবিহীন এসব পরিবহনের রাশ টেনে ধরতে পারছে না।

এমন বাস্তবতায় নিজেদের প্রয়োজনেই জীবনের ঝুঁকি জেনেও এসব বাসেই প্রতিদিন সওয়ার হতে হচ্ছে চলাচলকারীদের।

শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাত ৮টার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে দেখা গেলো ফিটনেসবিহীন এমন আরো অসংখ্য লক্কড়-ঝক্কড় বেহাল বাস রাস্তায় চলছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশকে ম্যানেজ করেই তাদের নাকের ডগায় দিনের পর দিন চুটিয়ে বাণিজ্য করছেন ত্রুটিযুক্ত বাসের মালিকরা। বাম্পার আর লুকিং গ্লাস না থাকা এসব পরিবহনের চালক ও মালিকরা সমান ধুরন্ধর। চালকরা প্রতিনিয়তই আইন ভাঙেন। মুড়ির টিন মার্কা এসব বাসের ঘড় ঘড় শব্দে বুক কাঁপে। লক্কড় ঝক্কড় বাস।  ছবি: মামুন

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালামের (৪০) অভিযোগ, এসব পরিবহনের কারণেই যানজট ও দুর্ঘটনা সমান তালে বাড়ছে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের এসব পরিবহনেই ছুটতে হচ্ছে।

স্থানীয় চা-পান বিক্রেতা খসরু মিয়া (৩০) এগিয়ে এসে বলেন, এসব বাসে আগে ঘষেমেজে নতুন রঙ লাগানো হলেও এখন তাও হচ্ছে না। আসলে চাকা আর ইঞ্জিন কোনমতে সচল রেখে এরা যাত্রীদের পকেট কাটছে। কিন্তু মেরামতে কোন খরচই করছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কখনো-সখনো অভিযান চললেও যাত্রীদেরই পদে পদে দুর্ভোগ-ভোগান্তি পোহাতে হয়। অভিযানের ঝক্কি’র কারণে এসব ফিটনেসবিহীন বাসের মালিকরা কৌশলী ভূমিকায় নামেন।

সড়ক থেকে তারা নিজেদের এমন চেহারার বাস গুটিয়ে নেন। ক’দিন পর ফের নামিয়ে দেন রাস্তায়।

গাজীপুর টু সায়দাবাদ রুটের এ সার্ভিসের মতোই গাজীপুর টু যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর টু সদরঘাটের লোকাল, সিটিং, টিকিট সার্ভিসেও একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে।

বিভিন্ন সার্ভিসের বেশিরভাগ বাসই দুমড়ানো বা রঙচটা। আবার সামনে-পেছনে বাম্পারবিহীন বাসের ছড়াছড়িও বেশ চোখে পড়ে।

এমন দশার পরিবহনের আধিক্যের বিষয়ে গাজীপুর টু সায়দাবাদ রুটে চলাচলকারী বলাকা সার্ভিস নামের এক পরিবহনের চালক বাংলানিউজকে বলেন, মুড়ির টিন বা লক্কড়-ঝক্কড় যে নামই দেয়া হোক না কেন, এসব পরিবহন ছাড়া যাত্রীদের উপায় নেই। সড়কে চলাচলের সময় ঘষাঘষির কারণেই তো এগুলোর রঙ উঠে যায়।

ফিটনেসবিহীন এসব যান চলে কীভাবে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযানের সময়ে কিছু বাস ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর অভিযান থামলে পুলিশকে ম্যানেজ করেই ফের এসব যানবাহন চলে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।