ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ত্রিশালে সড়কের ডিভাইডার ভেঙেছে ‘জেনভায়ো’, সেখানে বাঁশের বেড়া!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
ত্রিশালে সড়কের ডিভাইডার ভেঙেছে ‘জেনভায়ো’, সেখানে বাঁশের বেড়া! ত্রিশালে সড়কের ভ‍াঙা ডিভাইডারে বাঁশের বেড়া!-ছবি: অনিক খান

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) ঘুরে এসে: ‘জেনভায়ো’ নামে একটি ওষুধ কোম্পানির ভবন নির্মাণে সামগ্রী আনা-নেওয়ার কাজে যেন বাধা হয়ে দাঁড়ালো মহাসড়কের ডিভাইডার! একটু-আধটু পথ ঘুরেই নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী ট্রাকটি কোম্পানির ভেতরে প্রবেশ করতে পারতো। তা না করে ডিভাইডার ভেঙেই ভেতরে প্রবেশ করছে ট্রাক।

এছাড়া এ বাধা (ডিভাইডার) সরাতে ভিন্নপথে হাঁটলেন ওষুধ কোম্পানির মালিক। এজন্য তিনি কৌশলে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের এক নেতাকে ‘বগলদাবা’ করলেন।

ওই নেতাকে ম্যানেজ করে সবার চোখের সামনেই ঝকঝকে মহাসড়কের প্রায় ১৫ ফিট ডিভাইডার ভেঙে ফেলে ওষুধ কোম্পানিটি।

মহাসড়কের দেখভালের দায়িত্বশীলরা একথা জানার পর সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ছয়/সাত মাস আগের ঘটনাটি এটি।

এরপর চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মহাসড়কের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে মাটিভর্তি একটি ট্রাকের সঙ্গে সেনা সদস্যদের একটি জিপের সংঘর্ষ হয়। এতে চার সেনাসদস্য আহত হন।  

এ কারণে দীর্ঘদিন পরে ডিভাইডার ভাঙার বিষয়টি আবার আলোচনা আসে।
ত্রিশালে সড়কের ভ‍াঙা ডিভাইডারে বাঁশের বেড়া!-ছবি: অনিক খান
কিন্তু কোম্পানিটির বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিলেও নীরব স্থানীয় প্রশাসন।

সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ শহরের ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম প্রায় দুই বছর আগে ত্রিশালের বাগান এলাকায় জেনভায়ো নামে একটি ওষুধ কোম্পানির অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

কোম্পানিটির জায়গা-জমি দখল নিয়েও রয়েছে বিস্ত‍র অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, এসব বিষয় ধামাচাপা দিতেই স্থানীয় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলামকে ‘হাত’ করেন ওই ব্যবসায়ী।
ত্রিশালে সড়কের ডিভাইডার ভেঙেছে ‘জেনভায়ো’, সেখানে বাঁশের বেড়া!-ছবি: অনিক খান
ক্ষমতাসীন দলের নেতা দখলদার কোম্পানির সঙ্গে থাকায় জমি হারানো নিঃস্ব মানুষেরাও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ডিভাইডার ভাঙার মাস কয়েক পরে খবর পেয়ে মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের দায়িত্বশীলরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নাম উল্লেখ না করে ত্রিশাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেই তারা  নিজেদের দায়িত্ব এড়ান। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

এসময় এলাকাবাসীর প্রতিবাদের ম‍ুখে শেষ পর্যন্ত ওই নেতাই মহাসড়কে বাঁশের বেড়া দেন।  

মহাসড়কের ডিভাইডার ভাঙার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কোম্পানিটি সিকিউরিটি সদস্য আবুল কালাম বলেন, আমি এখানে যোগদানের আগেই এটি ভাঙা হয়। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললে সব জানতে পারবেন।

 ‘আপনাদের বিষয় ভাইস চেয়ারম্যান জানেন কীভাবে?’ এ প্রশ্নের জবাবে  সিকিউরিটি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম বলেন, ‘তিনি আমাদের মালিকের পার্টনার। আমাদের সবকিছু তিনিই দেখেন। তার অনুমতি নিয়েই এটি ভাঙা হয়েছে। ’
সড়কের ভ‍াঙা ডিভাইডার!-ছবি: অনিক খান
স্থানীয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন ক্ষোভপ্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, স্বপ্নের এ মহাসড়ক নির্মাণে ঘাম ঝরিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি আমাদের ঝকঝকে মহাসড়ক উপহার দিয়েছেন।

আর কথিত প্রভাবশালীরা নিজেদের ইচ্ছামতো মহাসড়কের ডিভাইডার ভাঙছেন।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, চার লেন সড়ক প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ মাস সাতেক আগে এ ডিভাইডার ভাঙা নিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। তদন্ত করে ডিভাইডার ভাঙার সত্যতা পাওয়া গেছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু জাফর রিপন বাংলানিউজকে বলেন, এ কোম্পানির জায়গা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এসি ল্যাণ্ড সেটি তদন্ত করে দেখছেন। তারা ডিভাইডার ভেঙে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়কের ভ‍াঙা ডিভাইডার!-ছবি: অনিক খান
অভিযোগসমূহের বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার পর ওই ডিভাইডারের ভাঙা অংশে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ক’দিনের মধ্যেই পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

অন্যসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সময় করে  তার সঙ্গে ‌সাক্ষাৎ করার অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
এমএএএম/ওএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।