ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুদককে ধোঁকা দিয়ে দায়মুক্তি পান এমপি আসলামুল হক

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৭
দুদককে ধোঁকা দিয়ে দায়মুক্তি পান এমপি আসলামুল হক এমপি আসলামুল হক ও দুদকের লোগো/ফাইল ফটো

ঢাকা: জমি দখল, মসজিদের জায়গা নিয়ে প্রতারণা, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে গড়িমসি, সম্পদের হিসাব নিয়ে গরমিলসহ নানান অভিযোগে টালমাটাল ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আসলামুল হক। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে টেক্কা দিয়ে ধোঁকাবাজি করে আইনের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছেন তিনি।

পরপর দুই সংসদ নির্বাচনে সম্পদের হিসাবে ব্যাপক ফারাক হওয়ায় সাত মাস অনুসন্ধানের পর আসলামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা ঠোকে দুদক। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে তখনকার কমিশন থেকে ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে অব্যাহতি পান তিনি।

একই দিন বিকেলেই আসলামুল হককে চিঠি পাঠায় দুদক। স‍াধারণত এতো দ্রুত সময়ে চিঠি পাঠানোর নজির নেই রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী এ প্রতিষ্ঠানটির। এটা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি তখন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদকের উপপরিচালক শেখ মেজবাহউদ্দিন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের অবৈধ সম্পদ রাখার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। যেখানে বলা হয়, কমিশন তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ কিংবা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি। দশম সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় আসলামুল হক ও তার স্ত্রী মাকসুদা হকের বিরুদ্ধে ১৪১ একর জমির মালিক হওয়ার তথ্য মেলে। সেখানে তিনি নিজেই বলেছিলেন, তার সম্পদ (জমি) বেড়েছে ৩৪ গুণের বেশি।

এদিকে আসলামুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো, ক্ষমতার পাঁচ বছরে সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হকের সম্পত্তি (জমি) বেড়েছে ৩৪ গুণের বেশি। ২০০৮ সালের হলফনামায় তিনি ও তার স্ত্রী মাকসুদা হক চার একর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক উল্লেখ করেন এবং দাম ধরেন ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৫শ টাকা। অন্যদিকে ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, স্বামী-স্ত্রী মিলে ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর (১৪ হাজার ৫৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ) জমির মালিক তিনি। যার তৎকালীন বাজার মূল্য ১ কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৫শ টাকা।

আরও পড়ুন: কি বলেছিলেন, আর কি করছেন এমপি আসলামুল হক!

অন্যদিকে তারই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি সংসদ সদস্য আসলামুল হকের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। দীর্ঘ সাতমাস অনুসন্ধান শেষে চলতি বছরের ২১ আগস্ট জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলায়ও করে তৎকালীন কমিশন। কিন্তু মামলার তদন্তে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ না পাওয়ায় আসলামুল হক দম্পতিকে দায়মুক্তি দেয় দুদক।

এমপি আসলামুল দুদককে বোঝান, নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তার ভুল তথ্য এসেছে। আর এ ভুলটি করেছেন তার আয়কর উপদেষ্টা। হলফনামায় জমির পরিমাণ ভুল এসেছে। অযুতাংশের জায়গায় শতাংশ এসেছে। ফলে যে কেউ এটাই ভাববেন আমার সম্পদ এতো বাড়লো কি করে। হয়তো তার এই কথা বিশ্বাস করেই তৎকালীন কমিশন তাকে দায়মুক্তি দেয়।

কিন্তু অবাক করা তথ্য, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, রিয়েল এস্টেট, কেমিক্যাল আমদানি, কনজ্যুমার প্রোডাক্টস ও ট্রেডিং ব্যবসা করে নিজের নামের পাশাপাশি স্ত্রীর নামেও শত শত কোটি টাকার সম্পদ গড়লেও দুদক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কোনো তথ্য পায়নি বলে উল্লেখ করে।

আরও পড়ুন: মসজিদের জায়গা নিয়ে আসলামুল হক এমপির প্রতারণা

এ বিষয়ে তখনকার দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আসলামুল হকের অবৈধ সম্পদ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কমিশন তদন্ত করে কোনো দুর্নীতির তথ্য পায়নি। যার কারণে কমিশন আসলামুল হককে অব্যাহতি দিয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, তখন এমন একটা পরিস্থিতি ছিলো সরকারদলীয় কোনো সদস্য ধরা পড়লে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হতো। এমনকি তিনি দোষী হলেও তার পক্ষ হয়ে কমিশনকে প্রতিবেদন তৈরি করতে হতো। এর পেছনে কোন কারণ জড়িত ছিলো সেবিষয়ে কেউই মুখ খুলতে চাননি। অন্যদিকে তারা এটাও বলছেন, দুর্নীতিকারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে বর্তমানে পিছুপা হয় না বর্তমান কমিশন। ইতোমধ্যে আপনারা বর্তমান কমিশন কেমন কাজ করছে সেটার সুফলও পেতে শুরু করেছেন।  

সঠিক তদন্ত করে আসলামুল হককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিলো কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে তার এখন কোনো কিছুই মনে নেই। তিনি খাতাপত্র না দেখে আসলামুল হকের বিষয়ে কিছুই বলতে পারবেন না। কেননা বিষয়টি অনেক আগের তাই নথিপত্র না দেখে বলা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৭
এসজে/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।