ঢাকা, বুধবার, ৩১ চৈত্র ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

লেখকরা সেলস গার্ল, সেলস বয়ে পরিণত হলে লেখক থাকেন না

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
লেখকরা সেলস গার্ল, সেলস বয়ে পরিণত হলে লেখক থাকেন না শেষ দিনে বইমেলায় আসা ক্রেতা দর্শনার্থীরা, ছবি: শাকিল

ঢাকা: মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় পর্দা নেমেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার। এবার বই বেরিয়েছে ৩ হাজার ৬৪৬ টি। এগুলোর বেশির ভাগই তরুণ লেখকদের। মেলার শেষ সময়ে এসে স্বনামধন্য লেখক, নাট্যকার, স্থপতি শাকুর মজিদ তাই কিছু পরামর্শ রেখেছেন এই নতুন লেখকদের প্রতি। একইসঙ্গে বইমেলায় তিনি লেখক-পাঠক কাছাকাছি আসার সুযোগ তৈরিতে দাবি তুলেছেন  আলাদা একটি চত্বর রাখতে।

শাকুর মজিদ ওইসব পরামর্শ আর দাবি তার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। মোট ৮টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন তিনি।

তার অনুমতি নিয়ে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য পোস্টের বক্তব্যগুলো তুলে ধরা হলো।
 
বাংলা একাডেমীর প্রতি দাবি রেখে তিনি বলেছেন-‘পরবর্তী বইমেলায় লেখকদের জন্য বড়ো একটা চত্বর চাই, মেলার ভেতরে। যেখানে লেখকেরা বসে কফি খেতে খেতে তার পাঠকের সঙ্গে কথা বলবেন ( নো সেলফি প্লিজ)। সাংবাদিকেরা সেই চত্বরে লেখককে পাবেন। পাঠক স্টল থেকে বই কিনে এনে লেখকের অটোগ্রাফ নিয়ে চলে যাবেন। লেখক স্টলে বসে প্রকাশকের বিড়ম্বনা বাড়াবেন কেন? একটা প্রকাশনীতে অনেক লেখকের বই বেরোয়। এক-দুই লেখক আঠা লাগিয়ে স্টলে বসে থাকলে ক্রেতা-পাঠক অস্বস্থিতে ভোগে। তার পছন্দের বই কেনা প্রভাবিত হয়। ক্ষেত্র বিশেষে লেখক অপমানিতই হোন। তার বই বাদ দিয়ে হূমায়ূনের বই কিনে তার সাথে সেলফি তুলে চলে যান পাঠক। ’
 
একইসঙ্গে বাংলা সাহিত্যের প্রসঙ্গ টেনে তরুণদের উদ্দেশে বলেছেন- ‘গত ৫ বছরেও বাংলাদেশের সাহিত্যাকাশে নতুন কোনো তারা তো দূরের কথা, চাঁদও ওঠেনি। ’
 
‘সবচেয়ে দুর্বল গদ্যকারেরা হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের নামের অনুকরণে নিজের উপন্যাস ছাপালেন। তাদের আর কোনো সম্ভাবনা নেই। আর যে নতুন লেখক হুমায়ূন আহমেদের স্টাইল নকল করতে চেয়েছেন, তিনি যেন নিজের ভ্রূণ নিজেই নষ্ট করলেন। ’
 
‘হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর কিছু তরুণ-যুবক-প্রৌঢ় মনের মধ্যে বিরাট আশা নিয়ে, নামী প্রকাশকের দুয়ারে ধর্না দিয়া কিছু বই ছাপিয়েছিলেন। আশা ছিলো- হুমায়ূনবিহীন মেলায় তারা হুমায়ূনের জায়গা নেবেন। তাদের সবার আশার গুড়ে বালি পড়েছে, ওখানে পিঁপড়াও যায় না। তারা জানেননা যে বই বাজার আর মাছ বাজার এক না। বোয়াল মাছ বাজারে না উঠলে আইড় মাছ সব বিক্রি হয়েও যেতে পারে। ’
 
‘হুমায়ূন আহমেদের ১৭৫ টি মৌলিক উপন্যাস নানা পারমুটেশন-কম্বিনেশনে নানা প্রকাশনী থেকে বেরুচ্ছে, 'নতুন বই' মোড়কে। এসবের প্রচুর চাহিদা এখনো আছে। তার সব বই কেউ পড়তে চাইলে তার আর অন্য বই পড়ার সময় থাকবে না। ’
 
গণমাধ্যমে খবরের উধৃতি দিয়ে শাকুর মজিদ বলেছেন-‘ফেসবুক আর টিভি রিপোর্টিং দেখে অনেক লেখকের জন্য খুব করুনা জন্মেছে। তারা তাদের বইটা বিক্রির জন্য হাপিত্তেশ করেছেন। লেখা পৌঁছানোর আরো অনেক বিকল্প মাধ্যম থাকে, সেখানে চেষ্ঠা করেন না। আর লেখকেরা নিজেরাই বাড়াবাড়ি রকমের প্রচারণা করেন বলেই হয়তো প্রকাশকেরা দূরে বসে মুচকি হাসেন। ’
 
‘আমি দুইদিন ঘুরে একটা স্টলে একজন লেখককে দেখেছি মাত্র, যার বইয়ে অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য লাইন ছিলো। বাকীগুলো সাজানো বা অন্য মতলবে। ’
 
বই প্রকাশের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘লেখকরা যখন সেলস গার্ল বা সেলস বয় এ পরিণত হোন, তখন আর তিনি লেখক থাকেন না। স্রেফ বই বিক্রেতায় পরিণত হয়ে যান। আমাদের এই সংখ্যাধিক্যের দেশে আমরা সবাই সব কিছু হতে চাই। আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টিভি, বেশি নাট্যকার, বেশি পরিচালক, বেশি আর্টিস্ট, বেশি লেখক, বেশি প্রকাশক, বেশি বই। কোনো না কোনো ভাবে এটা একটু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না আনলে কেবল বই বিক্রেতার সংখ্যা বাড়বে, লেখক আর বাড়বেন না। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩০১ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৭
ইইউডি/বিএস
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।