ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মানুষ মারবে আর বিচার হলে ধর্মঘট!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
মানুষ মারবে আর বিচার হলে ধর্মঘট! মানুষ মারবে আর বিচার হলে ধর্মঘট!

বাগেরহাট: দুর্ঘটনাগুলো হয়ইতো বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে। তারা গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে আর বিচার হলে ধর্মঘট। এ কেমন প্রতিবাদ! যে অপরাধ করেছে তাতে তো ফাঁসি হওয়া উচিত। কিন্তু যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তারপরও আবার মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন। কিছু বলার ভাষা নেই।

পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে তিক্ত আব্দুল কাদের নামে বাগেরহাট মোরেলগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। তিনি থাকেন খুলনার আলিয়া মাদ্রাসা রোডে।


মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় আব্দুল কাদেরের।

তিনি বলেন, ধর্মঘটের কারণে সকালে স্কুলে যেতে পারিনি। মোরেলগঞ্জ যেতে দুপুর দেড়টায় বাসা থেকে বের হই। ভ্যান, ইজিবাইক, মাহেন্দ্রতে করে ভেঙে ভেঙে মাত্র বাগেরহাট পৌঁছালাম। এখন মোরেলগঞ্জ যাব কি করে জানি না।

গন্তব্যে যেতে তার মতো এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। বাস, মিনিবাসের মতো গণপরিবহন না থাকায় গন্তব্যে যেতে সবার ভরসা এখন ইজিবাইক, মাহেন্দ্রের মতো ঝুঁকিপূর্ণ যান। তবে তাতে করে যাওয়া যাচ্ছে কেবলই স্বল্প দূরত্বে। দূরপাল্লার যাত্রীরা তাই নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।

খুলনা সরকারি বিএল কলেজের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান জয় বাংলানিউজকে বলেন, আমি বাগেরহাট থেকে কলেজে যাওয়া আসা করি। আস ক্লাস ছিলো কিন্তু গাড়ি না চলায় খুলনা যেতে হয়েছে ভ্যান, রিকশা, ইজিবাইকে করে ভেঙে ভেঙে। একদিকে গাড়ি নেই। তারপর এসব যান বাহনে ১০ টাকার দুরত্বের ভাড়া ৩০ টাকা দিতে হয়েছে।
অন্যসময় একশ’ কুড়ি টাকায় যাতায়াত করতে পারি। আর আজ কলেজে যেতে আসতে ২৭০ টাকা খরচ হয়েছে। সময়ও লেগেছে চার গুন। আমরা স্টুডেন্ট মানুষ কীভাবে পারব।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রত্যাশা বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ধর্মঘটের কারণে আজ ক্লাসে যেতে পারিনি। কিছুই চলছে না। সবাই জিম্মি হয়ে আছি। কবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব তাও জানিনা।

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইসমাইল হোসেন বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে এখানে আটকে আছি যেতে পারছি না। সোমবার ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবরে বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলাম তবে গাড়ি চলেনি। বলেছিলো মঙ্গলবার সকালে যাবে। টিকিটও নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু সকালে এলে বলে সারাদেশে ধর্মঘট শুরু হইছে। ধর্মঘটকারীরা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ অন্য যানবাহানও যেতে দিচ্ছে না। ফলে কোথাও যেতে পারছি না।

তার মতো মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের কথা জানেন না অধিকাংশ যাত্রী। সবাই জানতেন সোমবার খুলনা বিভাগের ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর।
২০১১ সালে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাস চালক জামির হোসেনের মুক্তির দাবিতে রোববার থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট ডাকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আঞ্চলিক কমিটি। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন সোমবার সন্ধ্যা থেকে তা প্রত্যাহারের খবর আসে।
তবে, রাতেই ঢাকায় এক সভা করে মঙ্গলবার ভোর থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাস চালক জামির হোসেনের মুক্তির দাবির সঙ্গে যুক্ত হয় সোমবার ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া চালক মীর হোসেন মিরুর মুক্তির দাবি। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সারাদেশ। আর বাগেরহাটসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অচলাবস্থা চলছে তিন দিন ধরে।

বাগেরহাট আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আবু বক্কর বাংলানিউজকে বলেন, ধর্মঘট কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। আমাদের হাতে কিছু নেই। আমাদের বিষয় হলে আমরা যাত্রীদের স্বার্থে বাস চালাতাম। এখন সারাদেশের ব্যাপার, তারা যে সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে।
এ বিষয়ে জানতে ধর্মঘট আহ্বান করা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বক্স দুদুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ