ঢাকা, শনিবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কি বলেছিলেন, আর কি করছেন এমপি আসলামুল হক!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
কি বলেছিলেন, আর কি করছেন এমপি আসলামুল হক! দখলি জমিতে গড়ে ওঠা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইনসেটে আসলামুল হক এমপি/ছবি: দীপু-বাংলানিউজ

ঢাকা: ২০১১ সালে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমি আগেই কাজ শুরু করেছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবো। এমনকি দ্রুত সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড করার কথা বলেছিলেন ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান সরকারদলীয় এমপি আসলামুল হক।

কথা ছিলো, এক বছরের মধ্যে বছিলা ও কেরানীগঞ্জে দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ করবেন। কেন্দ্র দু’টি থেকে মোট ২১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হবে।

এরপর ২০১১ সালের  ৪ মাস, তারপর আরও ৪ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজও সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পারেননি এ এমপি।

অথচ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলে বছিলা ব্রিজের উত্তর-পশ্চিম দিকে ধলেশ্বরী খালের জায়গা দখল করে ভরাট করেছেন। সঙ্গে দখলে নিয়েছেন অনেক নিরীহ মানুষের জমি। কথা দিয়েছিলেন টাকা দিয়ে দলিল করে নেবেন। এরপর সীমানাপ্রাচীর করে আর পাত্তাই দিচ্ছেন না। এই জবরদখলে রক্ষা পায়নি ওয়াসপুর জামে মসজিদের জমিও।

মসজিদের দেড় একর জমির জন্য ৪ কোটি টাকা দর নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ৮০ লাখ টাকা দেওয়ার পর এখন বোল পাল্টে ফেলেছেন সরকারদলীয় এ এমপি। তার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই নানাভাবে হয়রানি করে ছাড়েন।
 
দখলি জমিতে গড়ে ওঠা বিদ্যুৎকেন্দ্র/ছবি: দীপু-বাংলানিউজমঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন ওই এলাকায় গেলে ক্ষতিগ্রস্ত এক ভূমি মালিক বলেন, আমার দুই বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন এমপি আসলামুল। এমনকি দলিলও করে নেননি। অথচ আমার জমি চারদিক দিয়ে সীমানাপ্রাচীরে ঘিরে ফেলেছেন। টাকা চাইতে গেলে হত্যার হুমকি দেন তার এক ক্যাডার।

ওই ভূমি মালিক বলেন, ভাই দয়া করে আমার নাম লিখবেন না। নাম লিখলে গুলি করে মেরে ফেলবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব ফয়েজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এখনও শুরু করতে পারেননি আসলামুল হক এমপি। তবে শিগগিরই কাজ শুরু করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
যথাসময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে না যাওয়ায় কোনো জটিলতা তৈরি হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুটাতো প্রভাব পড়তেই পারে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন) গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গাবতলীতে যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করার কথা সেটি বছিলায় স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন আসলামুল হক। বিষয়টি বিবেচনাধীন। আর বছিলায় যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি করার কথা তার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।

দখলি জমিতে গড়ে ওঠা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সীমানাপ্রাচীর।  ছবি: দীপু-বাংলানিউজবিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, একই ধরনের অপরাধে ফেঞ্চুগঞ্জে ৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ দু’দফায় সময় বাড়ানোর পর বাতিলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু আসলামুল হকের বিষয়ে কেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না বিষয়টি বোধগম্য নয়। এতে চরম মাসুল দিতে হতে পারে সরকারকে। দেখা যাবে ২০১৮ সালের শেষ দিকে যখন নির্বাচন হবে তখন লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। আর সেই প্রভাব গিয়ে পড়তে পারে নির্বাচনে।

গাবতলীতে ১০৮ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টটির জন্য ‘ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং বছিলা পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ঢাকা নর্থ পাওয়ার ইউটিলিটি কোম্পানি লিমিটেডের নাম দিয়ে চুক্তি করে আসলামুল হক। হাই ফারনেস ওয়েল (এইচএফও) জ্বালানিনির্ভর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’টি থেকে সরকার ৬ টাকা ৯২ পয়সা (প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা) দর নির্ধারণ করেছে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আসলামুল হক আরও বলেছিলেন, বর্তমান সরকারের একজন সংসদ সদস্য হিসেবে সরকারের বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে আন্তরিক ভূমিকা পালন করবেন।  

দখলি জমিতে গড়ে ওঠা বিদ্যুৎকেন্দ্র/ছবি: দীপু-বাংলানিউজএখন কাজটি না নিজে করছেন, না অন্যকে করার সুযোগ দিচ্ছেন। পক্ষান্তরে চরম বিপদে ফেলছেন সরকারকে। আবার  বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনও ভয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।

এভাবেই আসলামুল হকের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে একে একে। যে জমিগুলো দখল করে ভরাট করেছেন তাতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেননি। পরিবেশ অধিদপ্তরও তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে। সেই মামলায় চার্জ গঠনও হয়েছে। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছে না। দিনরাত কাবার করে অব্যাহত রেখেছেন জমি ভরাট।

আগাগোড়া দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এ সংসদ সদস্য দশম জাতীয় সংসদের হলফনামায় উল্লেখ করেন, তিনি ও তার স্ত্রী এখন ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর জমির মালিক। পাঁচ বছরে স্বামী-স্ত্রীর জমি বেড়েছে ১৪০ একরের বেশি!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
এসআই/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।