ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মিরপুরে জ্বলে না চুলা, কিনে খাওয়াতেই ভরসা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
মিরপুরে জ্বলে না চুলা, কিনে খাওয়াতেই ভরসা জ্বলছে না চুলা, ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর পল্লবীর ৬ নম্বর রোডের বাসিন্দা রিজিয়া খানম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারেননি। আর এতে পরিবারের সব সদস্যকে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে!

সকালে না খেয়েই বাসা থেকে বের হতে হয়েছে গৃহকর্তাকে। তিনি অবশ্য পরে আহার সারেন রেস্তোরাঁতে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রিজিয়ার বাসার চিত্র ছিল এমন। সকাল ৭টার পর থেকে তার বাসায় ছিল না গ্যাস।

একই অবস্থা পল্লবীর পশ্চিম বাইগারটেক এলাকাতেও। এই এলাকার খালেদা বেগমের বাসায় সকাল ৭টার পর থেকে নিভু নিভু করে জ্বলছে চুলা। তিনি বললেন, একরকম যুদ্ধ করেই সকালের রান্না শেষ করেছি। দুপুরের রান্নার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ভাত হতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।

পরে ফের রিজিয়ার বাসা ঘুরে আরও জানা যায়, সারাদিন না থাকার পর বিকেল ৪টার দিকে গ্যাস আসে। শুরু হয় রান্নার আয়োজন।

আক্ষেপ করে এই গৃহবধূ বলেন, সকাল-দুপুর এখন খাবার কিনে খাই। কিনে খাওয়াতেই ভরসা।

এমন অবস্থা মিরপুর ১৪, ২, ১, ১১, ১২, ১০ বিআরপি ৩ নম্বর কলোনি, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলাসহ বিভিন্ন এলাকায়। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব এলাকার প্রতিটি বাড়িতে নিভু নিভু জ্বলছে গ্যাসের চুলা। কোনো কোনো বাসায় সক‍াল ৯টার পর থেকে গ্যাসই থাকে না।

এল‍াকাবাসী জানান, এই গ্যাস আসতে অপক্ষো করতে হয় বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোগান্তি শুধু মিরপুরেই নয়, রাজধানীজুড়েই।

এদিকে মেট্রোরেলের কাজ চলায় মিরপুর এলাকার বেশিরভাগ রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এতে কোথাও কোথাও স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

পশ্চিম বাইগারটেক ২৮/২ নম্বর বাড়ির খালেদা অভিযোগ করেন, ঢাকায় এখন বসবাস করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, সারাদিন গ্যাস থাকে না। আবার দফায় দফায় দাম বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের এই বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।

একদিকে দাম বাড়ানো হচ্ছে, অন্যদিকে গ্যাসের তীব্র সংকট কেন জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন ২০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকছে। প্রথমত ঘাটতি মোকাবিলায় নতুন করে গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে না। এদিকে নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় সংযোগ দেওয়ায় গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।

এছাড়া অবৈধ সংযোগের কারণেও গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে এক চুলার বিল ছিল ৭০ টাকা। ১৯৯৮ ও ২০০০ সালে দুই দফা বাড়ে গ্যাসের দাম। এতে এক চুলার জন্য বিল বেড়ে দাঁড়ায় ২১০ টাকা ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৩৩০।

২০০৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে আবাসিকে গ্যাসের দাম বেড়ে যায়। তখন এক ও দ‍ুই চুলার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ৫০ টাকা হারে। এতে আবাসিকে গ্যাসের দাম বেড়ে দাঁড়ায় এক চুলায় ৪০০ ও দ‍ুই চুলায় ৪৫০ টাকা।

২০১৫ সালে সবশেষ আবাসিকে এক চুলার জন্য প্রতিমাসে ৬০০ টাকা ও দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

চলতি বছর দু’দফা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ধাপে হাইকোর্টের রায়ে ছয় মাসের জন্য দাম কার্যকর স্থগিত করা হয়েছে। এখন কেবল বুধবার (০১ মার্চ) থেকে বেড়ে দাম হলো এক চুলা ৭৫০ টাকা ও দুই চুলা ৮০০।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
আরএটি/আরআর/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।