ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রেললাইনে হাঁটা-বসার ব্যাধি, আইন সীমাবদ্ধ নথিতে!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭
রেললাইনে হাঁটা-বসার ব্যাধি, আইন সীমাবদ্ধ নথিতে!   রেললাইনে বসে গল্প করছে তরুণরা/ছবি- অনিক খান

ময়মনসিংহ: একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতেন মাসুদুর রহমান (৩০)। রেললাইন ধরে অন্যমনস্ক হয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে গিয়ে ময়মনসিংহের বাঘমারা রেলক্রসিং এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। গত বছরের ৩০ মে এই প্রাণহানি ঘটে।
 

একই বছরের ৯ জুন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সীমানা ঘেঁষা রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে মো. মমিন (১৮) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়।

রেল আইন না মানায় ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণের এমন অপচয় ঘটছে নিয়মিতই।

এরপরও নেই জনসচেতনতা, নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ রেল কর্তৃপক্ষের। রেলপথের দুই পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও হরহামেশাই এ আইন ভাঙছেন পথচারীরা।

পুস্তক বা নথিতেই আইন সীমাবদ্ধ থ‍াকা ও তার ন্যূনতম প্রয়োগও না থাকায় রেললাইনে বসে গল্প করা ও রেললাইন ধরে হেঁটে চলাচল করা খুব স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 বিভিন্ন রেলক্রসিং এলাকায় রেললাইনের ওপরে বসে গল্প করার দৃশ্য নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে
রেললাইনে বসে গল্প করা বা হেঁটে পারাপার বন্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট হরিগোপাল সেন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, রেললাইনের ওপর দিয়ে হাঁটা বা চলাচল করা নিষেধ। স্টেশনের মাইকে যাত্রী বা পথচারীদের চলাচল না করতে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু নগরীর ক্রসিংগুলোতে বিষয়টি দেখভাল করার কোনো সুযোগ নেই। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া, কলেজ রোড, নতুন বাজার, মিন্টু কলেজসহ বিভিন্ন রেলক্রসিং এলাকায় রেললাইনের ওপরে বসে গল্প করার দৃশ্য নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ক্রসিং এলাকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার বা রেললাইন ধরে অবিরাম হেঁটে চলাচলরত মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

আবার রেলস্টেশন এলাকায় ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ যাত্রীর তা ব্যবহারে আগ্রহ নেই। কোনো কোনো সময় বয়স্ক যাত্রীরা ঝক্কি থাকায় ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে চান না। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের লাইন পেরিয়ে যেতে হয়। আর এ সময়টাতেই ঘটে যায় নির্মম দুর্ঘটনা।

দেখা যায়, রেললাইনের পাশেই অবৈধভাবে বাজার বা দোকান গড়ে উঠেছে। সেইসব দোকান ও বাজারে আগত লোকেরা প রেল দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রেল লাইনের ওপর বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মাহফুজ, শুভ, জীবন ও অর্ণব। রেললাইন ধরে চলাচল বা বসে থাকা যে নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ- এমন আইন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই তাদের।

তবে তারা জানান, ট্রেন আসার শব্দেই তারা লাইন থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। মাহফুজ ও জীবনদের মতো আরও অনেক কিশোরকেও দেখা গেলো লাইনে বসে গল্প করতে।
 বিভিন্ন রেলক্রসিং এলাকায় রেললাইনের ওপরে বসে গল্প করার দৃশ্য নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে
এদের মধ্যে সোহেল (২০) নামে এক কিশোর জানান, রেল কর্তৃপক্ষ এ আইন সংক্রান্ত কোনো প্রচারণা কোনোদিন চালায়নি।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১৮৬১ সালের ৫ নম্বর আইনের ১২ নম্বর ধারা মোতাবেক রেললাইনের দু’পাশে ১০ ফুট করে এলাকার মধ্যে রেলের কর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষ কিংবা গবাদিপশুর প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওই এলাকায় সব সময়ই ১৪৪ ধারা জারি থাকে।

ওই সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে আইনের ১০১ ধারায় যে কাউকে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু উল্টো ঝামেলা পড়ার আশঙ্কাতেই রেলওয়ে পুলিশ এ আইনের প্রয়োগ করে না।

সানকিপাড়া ও নতুন বাজার রেলক্রসিং এলাকা ঘুরে দেখা গেলো, অনেকেই পথের দূরত্ব কমাতে রেললাইনকে হাঁটার পথ হিসেবে ব্যবহার করছেন। কানে মোবাইল রেখে অসতর্কতার সঙ্গে হেঁটে চলেছেন তারা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজাহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পাবলিককে সতর্ক করতে আমরা চেষ্টা করি। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সভা-সমাবেশ করি। কিন্তু জনবল কম থাকায় এ প্রবণতা রুখে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭
এমএএএম/ওএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।