ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘রোটারিয়ানের নামে দেশে এখন চলছে তাইরে নাইরে আর সেলফি’

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭
‘রোটারিয়ানের নামে দেশে এখন চলছে তাইরে নাইরে আর সেলফি’ বক্তব্য রাখছেন আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা ৩২৮১ বাংলাদেশের রোটারি গভর্নর এফ এইচ আরিফ

ঢাকা: "রোটারিয়ানের নামে দেশে এখন চলছে তাইরে নাইরে আর সেলফি। চলছে ঘুরঘুর ফেলোশিপ! আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অংশ নিতে চার'শ জন গেলেন ম্যানিলায়। সম্মেলনের ভেন্যুতে পাওয়া গেলো মাত্র ১৪ জনকে। বাকিরা কেউ মজে রইলেন আড্ডায়। কেউ বা ঘুরঘুর আর অন্যরা মদ্যপানে। এদের দিয়ে কিভাবে সমাজ বদলাবে"।

রোটারি ক্লাবের ডিস্ট্রিক্ট টিম ট্রেনিং সেমিনারে এমন অকপট শব্দগুলোই উচ্চারিত হলো ২০১৭-১৮ বছরের আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা ৩২৮১ বাংলাদেশের রোটারি গভর্নর এফ এইচ আরিফের কণ্ঠে।

এভাবে হতাশা ছড়িয়ে আরো বললেন,দু'শো ক্লাব করেই বা কি লাভ! যদি সমাজের পরিবর্তনে কোন কাজ না হয়! যারা বার্ষিক চাঁদাটা পর্যন্ত দিতে পারেন না।

তাদের নিয়ে তো আগারগাঁও বস্তিতেই ক্লাব করা যায়। তার চেয়ে সমাজের কল্যাণে কাজ করতে পারে, দু'শোর পরিবর্তে এমন এক'শ ক্লাবই তো যথেষ্ট।

এফ এইচ আরিফ নিজে সরকারি আমলা। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) ক্যাডারের কর অঞ্চল-৪ এর এ্যাপিলেট কমিশনার। সরকারি দায়িত্বের বাইরে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সেবাধর্মী কাজে।

১৯৮৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রোটারির মাধ্যমে সমাজকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।  অভিজাতদের ক্লাব নিয়ে সমাজে নানা কথাই প্রচলিত আছে। এসবের একটি আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা গভর্নরের মুখ থেকে ‘রোটারিয়ানের নামে দেশে এখন চলছে তাইরে নাইরে আর সেলফি। ঘুরঘুর ফেলোশিপ’ মর্মে বক্তব্যে বেরিয়ে আসে ভেতরের নানা অসঙ্গতি আর অন্ধকার দিকগুলো।

সাভারে ব্র্যাক সিডিএমএ অনুষ্ঠিত দু'দিনের এই সেমিনারে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিচ্ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা ৩২৮১ এর অধীনে প্রায় দু'শো ক্লাব।

রোটারি ক্লাবের ডিস্ট্রিক্ট টিম ট্রেনিং সেমিনারে জেলা ৩২৮১ বাংলাদেশের রোটারি গভর্নর এফ এইচ আরিফের নির্মম সত্যগুলো উচ্চারণে নড়েচড়ে বসা সেমিনার কক্ষে অনেকের চেহারায় তখন কালো ছাপ। অব্যক্ত নানা প্রশ্ন।

কেন অন্ধকার খুঁড়ে অপ্রিয় সত্যগুলো খুঁড়ে আনছেন জেলা গর্ভনর?

"এসব বক্তব্যে অজনপ্রিয় হবো। তাই বলে পিছিয়ে থাকার উপায় নেই। সত্য বলতেই হবে"- অকপটে কথাগুলো বলছিলেন এফ এইচ আরিফ।

তিনি বলেন, "আজ পরিসর বাড়াতেই অনেকে মামা,খালুকে নিয়ে ক্লাব গড়ছেন। যাদের নেই শিক্ষা। ন্যূনতম মূল্যবোধ। এমনকি সমাজের জন্যে কিছু একটা করার মানসিকতা। কেবলমাত্র ক্লাব গড়া আর নেতা হবার জন্যেই নিজেরা অন্যের হয়ে মেম্বারশিপ ফি দিচ্ছেন। মূলত এটা করছেন কিছু ব্যবসায়ী সদস্য। মেনে নেয়া যায় না"- আক্ষেপ ঝরে এফ এইচ আরিফের কণ্ঠে।

 বক্তব্য রাখছেন আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা ৩২৮১ বাংলাদেশের রোটারি গভর্নর এফ এইচ আরিফথাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেবার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এফ এইচ আরিফ বলেন, ‘৫'শ জন অংশ নেবার জন্যে নিবন্ধন করলেন। সম্মেলন কক্ষে পাওয়া গেলো বাংলাদেশের ৫০ জনকে। কাজের কাজ নেই। ঘুরঘুর ফেলোশিপ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন অনেকে। ঘুরঘুর নয়। চাই কাজের ফেলোশিপ। ’

তিনি বলেন, "কি আর বলবো! গ্লোবাল প্রজেক্ট নিয়েই কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। অনেকে এসব অনুষ্ঠানে কথাই বলতে পারেন না! অনেকের উদ্দেশ্যই থাকে বিদেশ ভ্রমণ, ভিসা প্রাপ্তি। উন্নত দেশে গিয়ে অনেকেই আর ফেরেন না। অবৈধভাবে অভিবাসী হবার চেষ্টা করেন। এটা রোটারির বদনাম। দেশের বদনাম। তারা এটা ভুলে যান যে,বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিলেন। পালিয়ে যেতে নয়। আমরা দূতাবাসে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেবো। জেলা গর্ভনরের সুপারিশ ছাড়া যাতে কাউকে ভিসা দেয়া না হয়।

আপনারা সার্ভিসের (সেবা) নামে সেলফি তুলবেন। বছরে একটি ভালো কাজও করবেন না। খালি ঘুরঘুর করবেন। এসব চলবে না। ’

ডিরেক্টরিতে এদের ছবি তুলে অকার্যকর সদস্যদের ভিন্ন পরিচিতি তুলে ধরার উদ্যোগের কথাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, "সার্ভিস নাইকা! খালি ফেলোশিপ। চইলতো ন" এটা রোটারি চায় না। সমাজের জন্যে কিছু দেবার মানসিকতা থাকতে হবে। রোটারি ক্লাবে রাজনীতি ঢুকে গেছে। আমরা মারামারি করি নিজেদের মধ্যে। যে কারণে আন্তর্জাতিক রোটারি প্রেসিডেন্ট হবার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন লোক দেশে থাকা সত্ত্বেও আমরা এখনো হতে পারিনি"

নোংরা রাজনীতির ইঙ্গিত করে এমন হতাশার কথাও জানান ২০১৭-১৮ বছরের আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা ৩২৮১ বাংলাদেশের রোটারি গভর্নর এফ এইচ আরিফ। তিনি ছিলেন ১৯৯৪-৯৫ বছরে বাংলাদেশের নির্বাচিত রোটাৠাক্ট প্রধান।

সমাজকল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ক্লাব সভাপতি, শ্রেষ্ঠ লেফটেন্যান্ট গভর্নরসহ অন্যান্য পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

এ ছাড়াও সরকারি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি)এর রেক্টরস স্বর্ণপদকসহ সেবার জন্য প্রেসিডেন্ট রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৮), সিএনসি অ্যাওয়ার্ড (২০০৮), প্রেসিডেন্ট পদক (২০০৯) লাভ করেন

রোটারি জেলা ৩২৮১ বাংলাদেশের রোটারি গভর্নর এফ এইচ আরিফ।

বাংলাদেশ সময়: ০২২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।