ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাদ নাকি চিংড়ির পা আর ঘিলুতে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
স্বাদ নাকি চিংড়ির পা আর ঘিলুতে গলদা চিংড়ির পা, ঘিলু এবং মাথা বিকি-কিনি

বাগেরহাট: সাদা সোনা খ্যাত গলদা চিংড়ির বাজার এখন মন্দা। স্থানীয় বাজারগুলোতে কমে গেছে গলদার দাম। তবে চিংড়ির দাম কমলেও বাগেরহাটের বাজারগুলোতে দিন দিন বাড়ছে গলদা চিংড়ির পা, ঘিলু এবং মাথার চাহিদা।

খেতে দারুণ সুস্বাদু চিংড়ির পা, ঘিলু ও মাথা দিয়ে এখন তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের খাবার। ফলে রপ্তানির জন্য গলদা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত করার সময় বাদ দেওয়া পা এবং মাথার এখন চড়া দাম।

চাহিদা আর দাম বাড়ায় কেবল চিংড়ির পা, মাথা ও ঘিলু নিয়েই এখন বসছে জমজমাট হাট। দেশের অন্যতম বড় চিংড়ি আড়ৎ বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতাকে কেন্দ্র করে এমন হাট গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি।

প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এসব হাটের প্রধান বিক্রিত পণ্য হচ্ছে চিংড়ির পা, মাথা ও ঘিলু। এছাড়া চাহিদা থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোতেও এখন মাছের পাশাপাশি চিংড়ির মাথা ও পা বিক্রি হচ্ছে।

বাগেরহাটের বেলায়েত হোসন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মোল্লা মাসুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, গলদা চিংড়ির পা এবং মাথা দু’টোই খুব সুস্বাদু। পা দিয়ে বিভিন্ন রেসিপির পাশাপাশি নুডুলসের সঙ্গেও খেতে দারুণ। এখন তো বাসা থেকে নিয়মিতিই চিংড়ি মাছের মাথার ঘিলু ও পা নিয়ে যেতে বলে।

তিনি বলেন, এগুলো বেশি পাওয়া যায় ফকিরহাটের দিকে। ফকিরহাটের ফলতিতা মৎস্য আড়তের সামনে, ফকিরহাট পুরাতন রেল স্টেশন এলাকায়, ফকিরহাট কাজী আজাহার আলী কলেজের সামনে, ফকিরহাট বিশ্ব রোডের মোড়, চিতলমারী উপজেলা সদরের স্টিল ব্রিজ এলাকা, মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা, নাশুখালী বাজার ও জয়ডিহি এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় চিংড়ির পা, মাথা ও ঘিলু নিয়ে হাট বসে।

ফকিরহাট কলেজ গেটের সামনে চিংড়ির পা ও ঘিলু কিনতে আসা নাজমা আক্তার বলেন, শীত মৌসুমে গলদা চিংড়ির পায়ের শাস অত্যন্ত সুস্বাদু। মাথার ঘিলুরও স্বাদ দারুণ। বিভিন্ন তরকারিতে দিলে খাবারের স্বাদ বাড়ে। ঘিলু আর পা আলাদাভাবেও রান্না করে খাওয়া যায়। চিংড়ি মাছের মাথা দিয়ে চপ আর পায়ের শাস দিয়ে নুডুলস রান্না করলে বাসার সবাই খুব পছন্দ করে খায়।

এই হাটের বিক্রেতা মামুনুল হুদা বলেন, আমি সকাল থেকে ফলতিতা আড়তে কাজ করি। সেখানে চিংড়ির গ্রেডিং করার পর বাদ দেওয়া মাথা ও পা নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করি।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রপ্তানিযোগ্য চিংড়িগুলো চাষিরা প্রথমে স্থানীয় আড়ৎগুলোতে বিক্রি করেন। আড়তে আকৃতি অনুয়ায়ী চিংড়িগুলোকে গ্রেডিং করার পর তা প্রসেসিং এর জন্য ফ্যাক্টরিতে পাঠানো হয়। এর আগেই আড়ৎ থেকে চিংড়ির মাথা ও শাস যুক্ত পাগুলো আলাদা করা হয়।

অনেক ক্ষেত্রে আবার বিভিন্ন কোম্পানিতে নিয়েও আলাদা করা হয় এই মাথা এবং পা। মূলত কোম্পানি এবং আড়ৎগুলোতে কাজ করা শ্রমিকরাই সেখান থেকে স্বল্প মূল্যে এগুলো কিনে এনে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। প্রথম দিকে ঘিলুসহ মাথা বিক্রি হতো। তবে এখন মাথা থেকে আলাদা করে বিক্রি হচ্ছে ঘিলু।

বিক্রেতা আব্দুস সামাদ ফকির জানান, আগে এগুলোর তেমন দাম পাওয়া যেতো না। এখন ভালোই চাহিদা। তাই বিক্রিও আগের চেয়ে বেড়েছে।  চিংড়ির মাথা দিয়ে  তৈরি চপ

বর্তমানে ঘিলু প্রতি কেজি দেড়ে থেকে দুইশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পায়ের দামের কোনো ঠিক নেই। যখন যেমন পাওয়া যায়।

বিক্রেতা কালাম মিয়া বলেন, রেস্টুরেন্ট এবং রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকানে চিংড়ির মাথা দিয়ে চপ তৈরি করা হয়। ওই সব দোকান মালিকরা তো এখন আগে থেকে এসে মাথার অর্ডার দিয়ে যায়।

বাগেরহাট জেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরে জেলার নয়টি উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। মূলত রপ্তানিযোগ্য হওয়ায় বাগেরহাটসহ দক্ষিণঞ্চালে দিন দিন চিংড়ি চাষ বাড়ছে।

ফকিরহাটের ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. হায়দার আলী বলেন, ব্যাপকভাবে চাষ হলেও স্থানীয় বাজার এবং সাধারণের কাছে চিংড়ির দাম বরাবরই চড়া। প্রথম দিকে মাথা ও পা রপ্তানি না হওয়ায় খুব সস্তায় পাওয়া যেতো। তবে বর্তমানে ভোজন রসিকদের কাছে কদর বাড়ায় চাহিদার সঙ্গে মাথা, ঘিলু এবং পায়ের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে জমে উঠছে এসব ক্ষুদ্র হাট।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।