ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাজনীতির বলি হচ্ছে নদী ও পানি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
রাজনীতির বলি হচ্ছে নদী ও পানি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের  বিশেষজ্ঞরা-ছবি-সুমন শেখ

ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বলি হচ্ছে বাংলাদেশের নদীগুলো। 

বাংলাদেশ, নেপাল ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতের মানুষ নদী ও পানির সংকট সমাধানে কথা বললেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে নদীর অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে।  

এর প্রভাবে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের নদীপথ ২৪ হাজার কিলোমিটার থেকে নেমে এসেছে ৪ হাজার কিলোমিটারে।

হাজার নদীর বাংলাদেশ এখন চারশ’ নদীতে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুযারি) দুপুরে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নদী সুরক্ষা যাত্রা-২০১৭’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের  বিশেষজ্ঞরা।

একশন এইড বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ওয়াটার কমন্স ফোরামের আয়োজনে ‍অনুষ্ঠানে একশনএইডের ম্যানেজার শমসের আলী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

শমসের আলী বলেন, জাতিসংঘ ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহে নৌ-চলাচল বহির্ভূত ব্যবহার সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করে। যেখানে বলা হয়, কোন দেশ এককভাবে বা যৌথভাবে এমন কোনো প্রকল্প প্রণয়ন করতে পারে না, যাতে অন্য কোনো দেশ বা জাতি বা নদী প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ রাজনৈতিক কারণে এই আইনে অনুস্বাক্ষর করেনি। ভারতও নিজের দেশের রাজনীতির বিবেচনায় আন্তর্জাতিক এই আইন স্বাক্ষর না করায় বাংলাদেশ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এরপর ‘নদী ও নেপাল প্রেক্ষাপট’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একশনএইডের নেপালের প্রোগ্রাম অফিসার শিবা পোখারেল।

তিনি বলেন, নদী রক্ষায় আঞ্চলিক সহযোগিতা না থাকায় নদী ও পানির অধিকার রক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রতিবেশী দেশের অসহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে নদী সুরক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে হচ্ছে না। যার মূল ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এ সময় নদীপাড়ের মানুষের মানবেতর জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরা হয়।

রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের কৃষক ও মৎস্যজীবী তাহসেন আলী তার সব হারানোর গল্প বলেন। তিনি বলেন, ১৯৬০ সালে আমি পদ্মায় মাছ ধরতাম। হঠাৎ ভারত উজানে বাঁধ দিলে ভাগ্য খারাপ হতে থাকে। আস্তে আস্তে ভরা পদ্মা মরতে থাকে। এখন নদীতে নৌকা চলে না; মাছ ধরা তো দূরের কথা। এখন আর আমরা কৃষিকাজ করতে পারি না। শুধু ধূ-ধূ বালুচর। এখন হাজার হাজার জেলে কর্মহীন।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও দেশীয় নানা কারণে বাংলাদেশের ভূ-পৃষ্ঠ ও ভূ-গর্ভস্থ পানির ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পানির ন্যায্য হিস্যা আমরা না পাওয়ায় আমাদের কৃষিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। দেশের অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে একসময় পানিপ্রবাহ একেবারে হারিয়ে যাবে। আঞ্চলিকভাবে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পানির কোনো সীমানা বা রাজনীতি নেই। কিন্তু আমাদের রাজনীতির কারণে পানি ও নদী তার নিজস্ব অধিকার হারিয়েছে। সমস্যা আরও গভীর ও জটিল হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পানির চুক্তি বিষয়ে উদ্যোগী হতে চায়। তবে পশ্চিমবঙ্গ এবং আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে তারা এই চুক্তি করছে না। আমরা যদি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোচ্চার হই তবে সরকার উদ্যোগ নেবে। তাই আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

অনুষ্ঠানে ওয়াটার কমন্স ফোরামের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- যে কোনো নীতি ও উন্নয়ন পরিস্থিতিতে নদীপাড়ের মানুষের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগানো, যেকোন উন্নয়ন প্রকল্পে সধারণ মানুষকে যুক্ত করা,  নদী ও পানি বিষয়ে যেকোন দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক আলোচনা সাধারণ মানুষের সামনে প্রকাশ করা, জাতিসংঘের নদী বিষয়ক আইনে স্বাক্ষর এবং য়ৌথ নদী কমিশনকে দক্ষিণ এশিয়ার নদী কমিশনে রূপান্তর করা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, একশনএইডের ডিরেক্টর আসগর আলী সাবরী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
এমসি/আরআর/আরআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।