ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সমাজের কাছে একটু সাহায্য অথবা বিষ চায় অসহায় কিশোর সেন্টু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
সমাজের কাছে একটু সাহায্য অথবা বিষ চায় অসহায় কিশোর সেন্টু সমাজের কাছে একটু সাহায্য অথবা বিষ চায় অসহায় কিশোর সেন্টু/ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘ভাই আপনাগোর কাছে একটা অনুরোধ, আমারে একটু বিষ কিন্যা দিয়া যান। হাসপাতাল থেকে দেওয়া দুধের সঙ্গে খাইয়্যা মইরা যাই। আমি আর সহ্য করতে পারতাছি না।

কোমরের ঘা’য়ে পচন ধরছে। রাইতে দেহি বড় বড় পোকা হইছে।

খুব জ্বালা করে রে ভাই। আমি আর বাঁচতে চাই না। বিষ কিনে দিয়া যান ভাই। ’

উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করে কথাগুলো বাংলানিউজকে বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ফ্লোরে পড়ে থাকা সেন্টু নামের এক অসহায় কিশোর।

সরেজমিনে হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সহজে পাওয়া যায় সেন্টুকে। সেন্টু বাংলানিউজকে জানায়, গত সাত মাস ধরে হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছে সে।

তার গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নীলকমল গ্রামে। ছোট একটি রিকশার গ্যারেজের মালিক ছিলেন তার বাবা। সেন্টুর ছোটবেলায় তার বাবা একটি হত্যা মামলায় ভুল আসামি হয়ে কারাগারে যান।

বাবার শোকে মা হয়ে যান পাগল। ভাই-বোনরা যে যেখানে পারে চলে যায়। সেন্টু হয়ে যায় টোকাই। ভাই বোনরা কে কোথায় তাও জানে না সে। কখনও কাগজ টুকিয়ে, কখনো বা প্লাস্টিক কুড়িয়ে জীবন চলতো তার।

সাত মাস আগে একদিন প্রচণ্ড ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে চুরি করতে যায় মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে। বাড়ির পাইপ বেয়ে ওঠে তিন তলায়।

ডিস ক্যাবলের তার কাটতে গিয়ে হঠাৎ পা ফসকে পড়ে যায় নিচে। এতে কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তার কান্না শুনে টহল পুলিশ তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেয়।

তার বড় ভাই খোঁজ পেয়ে তাকে ভোলার চরফ্যাশনে তাদের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে হঠাৎ ইনফেকশন দেখা দিলে তাকে গ্রাম থেকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সামনে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালের লোকজন তাকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। এখন সে বার্ন ইউনিটের তিন তলায় বারান্দায় পড়ে আছে। সেখানে তার বাড়ির কাউকে পাওয়া যায়নি।

বার্ন ইউনিটের অফিস কক্ষে কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনায় তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। প্রস্রাবের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তল পেট ছিদ্র করে প্রস্রাবের একটা জায়গা করে দেয়া হয়েছে।

সে কোনোভাবেই চলাচল করতে পারে না। কারণ কোমর নিচে থেকে অনুভূতিহীন হয়ে আছে। এখন প্রস্রাব-পায়খানা বের হয়ে বেড নোংরা হয় বলে বেডে উঠতে বললেও সে ওঠে না।

কলাপসিবল গেটের কাছে মেঝেতেই থাকে সে। তাকে ‍অফিসের সবাই মিলে সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তার হয়ে স্বাক্ষর করার কেউ না থাকায় অপারেশন হচ্ছে না।

সেন্টু বাংলানিউজকে বলে, ‘অপারেশন করে দিলে আমারে দেখবো কে? ভাই আপনেরা আমার অপারেশনের ব্যবস্থা কইরা দেন। চিকিৎসকরা কইছে কোনো ব্যাটা যদি সই দেন, আমার দায়িত্ব নেয়, তাহলে আমার অপারেশন হইবো। এছাড়া অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবো। ভাই আমারে আপনারা এ যন্ত্রণার হাত থেকে আমারে মুক্ত করতে সাহায্য করেন। আমি আর পারতাছি না। ’

সেন্টুকে পাওয়া যাবে ঢামেকের বার্ন ইউনিটের তিনতলায় বারান্দায়। তাকে সাহায্যের জন্য সমাজের সহৃদয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কামনা করেছে অসহায় কিশোর সেন্টু।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
এএটি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।