ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘তারেক-মিশুকের মৃত্যু দেশের জন্য অপরিমেয় ক্ষতি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
‘তারেক-মিশুকের মৃত্যু দেশের জন্য অপরিমেয় ক্ষতি’

ঢাকা: প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরকে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের প্রথিতযশা দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র উল্লেখ করে আদালত বলেছেন, এ মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপরিমেয় ক্ষতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মিডিয়া জগৎও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা  জজ আল-মাহমুদ ফাইজুল কবীরের আদালত তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ ৫ জনের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার মামলার রায়ে এমন মন্তব্য করেন।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে কাগজের ফুল সিনেমার সুটিং স্পট দেখে তারেক মাসুদ, তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ ৯ জন মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় ফিরছিলেন।

পথে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-০৩০২) সঙ্গে বিপরীতমুখী চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪২৮৮) সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ মাইক্রোবাসের চালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন নিহত হন।

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, অধ্যাপক ঢালী আল-মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি এবং তারেক মাসুদের সহকারী মনীশ রফিক।

রায়ে বলা হয়, ‘সাক্ষ্য, এজাহার, তদন্ত প্রতিবেদন এবং দালিলিক সাক্ষ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ঘটনার দিন ও সময়ে ঘটনাস্থলে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের প্রথিতযশা দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ মোট ৫ জন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। মাইক্রোবাসের মোট ১০ জন আরোহীর মধ্যে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদসহ অন্যরা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান’।

‘তারেক মাসুদ ছিলেন একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্র নাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার। অন্যদিকে, মিশুক মুনীর ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক, সম্প্রচার কিংবদন্তী, টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃ‍ৎ ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক। মিশুক মুনীর ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর ছেলে এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। একই সড়ক দুর্ঘটনায় এ দুই গুণি সৃজনশীল মানুষের মৃত্যুতে মিডিয়া জগতে গভীর শোক নেমে আসে’।

রায়ে আরও বলা হয়, ‘এ দু’জন গুণি ব্যক্তি ছাড়াও গাড়ির চালক মোস্তাফিজুর রহমান, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপরিমেয় ক্ষতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে নিহত ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর করুণ কাহিনী ফুটে ওঠে’।

বাস চালকের বিষয়ে রায়ে বলা হয়, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিল করা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালকের ২০১১ সালের ১৭ আগস্টের চিঠিতে স্পষ্ট হয় যে, বিআরটিএ’র রেকর্ড অনুসারে আসামির ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ বিগত ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল উত্তীর্ণ হয়ে যায়’।

‘সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বিশ্লেষণে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, আসামি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সারা রাত গাড়ি চালানোর পর পুনরায় ঘটনার সময় ফিটনেসবিহীন ঘাতক বাসটিকে বৃষ্টি ও বাঁকের মধ্যে অবহেলার সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন। একটি মিনিবাসকে ওভারটেক করে ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাসটিকে নির্মমভাবে আঘাত করার মাধ্যমে মাইক্রোবাসটিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেন তথা মাইক্রোবাসটিকে ব্যবহারের অনুপযোগী করে দেন। এবং মাইক্রোবাসের ১০ জন যাত্রীর মধ্যে ৫ জনের তাৎক্ষনিক মৃত্যু ঘটান এবং ৪ জন গুরুতর আহত হন’।
 
‘প্রসিকিউশন পক্ষ উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক ঘটনার মাধ্যমে আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা ও ৪২৭ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আসামির বেপরোয়া ও অবহেলার কারণে ঘটনাস্থলেই ৫ জনের মৃত্যু ঘটে। এতে বাংলাদেশের মিডিয়া জগৎ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়’।

‘কাজেই, এ ধরনের অপরাধ সংঘটনকারী আসামিকে দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদর্শনের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই’।

রায়ের আদেশের অংশে বলা হয়, ‘আসামি মো. জামির হোসেন ওরফে জমির ড্রাইভার, পিতা মৃত-আব্দুর রহিম বিশ্বাস, সাং-দৌলতদিয়ার স্কুলপাড়া, থানা ও জেলা-চুয়াডাঙ্গা এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৪২৭ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪২৭ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো’।

‘আসামির উভয় দণ্ড একত্রে চলবে। দণ্ডিত আসামির হাজতবাস (যদি থেকে থাকে) মূল দণ্ড থেকে বাদ যাবে। আসামির জামিন বাতিল করা হলো। আসামিকে সাজা ভোগের জন্য সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হোক’।

** তারেক-মিশুক নিহতের মামলায় চালকের যাবজ্জীবন

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ