ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সচল নৌকা যেখানে অচল!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
সচল নৌকা যেখানে অচল! তিস্তায় পানি না থাকায় নৌকাগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে-ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: নদী পাড়ের মানুষের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাতায়াতের একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। আর সেই নদীই যদি হয়ে যায় পানি শুন্য তবে অচল হয়ে পড়ে সচল নৌকাও। আর তেমনটিই হয়েছে তিস্তার অবস্থা।  

বর্তাম‍ানে পানি শুন্য তিস্তায় অসংখ্য সচল নৌকা অচল হয়ে ধূলার মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্ষাকালে খরস্রোতা তিস্তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছাতে নৌকার বিকল্প নেই।

কিন্তু ভারতের এক তরফা তিস্তা শাসনে বসন্তকালেই খরস্রোতা তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

চিরচেনা তিস্তার বুকে সর্বাক্ষণিক ছুটে চলা ছোট বড় অসংখ্য নৌকা আজ পানির অভাবে অচল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফলে মাইলের পর মাইল ধূ ধূ বালুময় পথ পায়ে হেঁটে চলতে হচ্ছে তিস্তা চরাঞ্চলের মানুষদের। শুধু তাই নয় অনেক কষ্ট শিকার করে চরবাসীকে তাদের উৎপাদিত পণ্য আনা নেওয়া করতে হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য নিয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছে তিস্তা পাড়ের মানুষ-ছবি: বাংলানিউজ

এখানেই শেষ নয় এসব নৌকা ব্যবহার করে তিস্তার বুকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত তিস্তা পাড়ের হাজারও পরিবার। পানি শুন্য হওয়ায় এসব পরিবারও অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে।    

জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ঐতিহাসিক এ তিস্তা নদী। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশে গেছে। এর মোট দৈর্ঘ প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।
ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বসন্তেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়।

ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

পানি শূন্য তিস্তায় ধূ ধূ বালু কণা-ছবি:বাংলানিউজতিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেল সেতু, তিস্তা সড়ক সেতু ও নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু যেন প্রহসনমূলক ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধূ-ধূ বালুচরের তিস্তার উপর। ব্রিজ থাকলেও পায়ে হেঁটেই পার হচ্ছে অনেকেই। ঢেউহীন তিস্তায় রয়েছে শুধু বালু কণা।

খেয়াঘাটের মাঝি মাজহারুল আক্ষেপের সুরে বাংলানিউজকে বলেন, তিস্তার পানি শুকিয়ে গেছে নৌকা চালাবো কোথায়, তাই সবাই হেঁটেই পার হচ্ছে।
 
সব কষ্ট যেন তাদের কপালেই লেখা এমন মন্তব্য করে তিস্তা পাড়ের কৃষাণি লাকী বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষার সময় বন্যায় কষ্ট করি আর শুষ্ক সময়ে পানির অভাবে ফসল শুকিয়ে মরে।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রয়োজনের তুলনায় তিস্তার পানি প্রবাহ অনেক কম। এ বছর সেচ প্রকল্প সচল রাখাই কষ্টকর হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।