ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রদ্ধার ফুলে ‘বর্ণমালা’ আর ‘বাংলাদেশ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
শ্রদ্ধার ফুলে ‘বর্ণমালা’ আর ‘বাংলাদেশ’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীমূলে ফুলে ফুলে গড়ে তোলা একখণ্ড বাংলাদেশ। ছবি: জিএম মুজিবুর ও দীপু মালাকার

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে: একুশের প্রথম প্রহর থেকে ভাষাশহীদদের স্মৃতির মিনারের বেদীতে হাজারো জনতার ফুলেল শ্রদ্ধা। আর সেই শ্রদ্ধার ফুল দিয়ে শহীদ বেদীতে তৈরি হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র। ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘অমর একুশে’, ‘একুশ আমার চেতনা’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ‘বিশ্ববিদ্যালয়’র মনোগ্রাম। ভোরের আলোতে এসব কর্ম যেন ভাষাশহীদদের স্মৃতিকেই চির ভাস্মর করে তুলে ধরেছে।

এক কথায়, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। একুশের প্রথম প্রহর থেকে সকাল পর্যন্ত লাখো মানুষের ঢল নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্মৃতির মিনারে।

সাদা ও কালো পোশাক গায়ে খালি পায়ে হাতে ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তারা।
 
প্রথম প্রহর থেকে শুরু করে মধ্যরাতের পর কিছুটা ভিড় কমলে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে দায়িত্ব পালন করা রোভার স্কাউটস এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সদস্যরা ফুলগুলো সাজিয়ে দেন শহীদ মিনারের রক্তরাঙা বেদীতে।
 
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে বিরোধী দল, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি বিশেষে শ্রদ্ধা জানান শহীদ বেদীতে।
 
১২টা ১ মিনিটে সবার আগে শহীদ মিনারের বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। সাদা পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিব কোর্ট পরেছিলেন রাষ্ট্রপতি। আর সাদা-কালো শাড়ি পরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে কালো ব্যাজ ধারণ করেন তারা।  
শহীদ মিনারে ‘বর্ণমালা’ সাজ।  ছবি: জিএম মুজিবুর ও দীপু মালাকারতার আগে ১১টা ৪৯ মিনিটে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এসময় তাকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন।

এরপর ১১টা ৫২ মিনিটে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পৌঁছান রাষ্ট্রপতি। সেসময় তাকে প্রধানমন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত জানান।
 
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বেদীতে পুনরায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।
 
প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ছেড়ে যাওয়ার পর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।  
শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসে শিশু-নারীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ।  ছবি: জিএম মুজিবুর ও দীপু মালাকারএরপর একে একে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
 
রাত ১টা ২৫ মিনিটে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৫টার দিকে শ্রদ্ধা জানান নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সহ অন্য কমিশনাররা।
 
ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণ, ঢাকার দুই মেয়র, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর প্রধানরা, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরগ ব্রেন্ডকে নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ১৪ দলের পক্ষ থেকে শীর্ষ জোটের নেতৃবৃন্দ, পুলিশ পরিবারের পক্ষ থেকে এর মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, ভারতীয় হাইকমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূতরা।
 
শ্রদ্ধা জানায় সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামও। তাদের পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা হুইল চেয়ারে বসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানান শহীদ পরিবারের সদস্যরাও।
ফুলে ফুলে সেজেছে শহীদ মিনার।  ছবি: জিএম মুজিবুর ও দীপু মালাকারৠাবের মহাপরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলা একাডেমি, জাসদ, ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ টেলিভিশন, রোভার স্কাউট, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান।

শ্রদ্ধা জানায় বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, তরিকত ফেডারেশন ও বাংলাদেশ হিজড়া কল্যাণ পরিষদও।

সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।  
 
ভোররাতের পর আবারও ভিড় শুরু হয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারের দাবি জানাচ্ছেন শহীদদের গভীর ভালোবাসায় স্মরণ করতে আসা মানুষেরা।  

এদিকে, জাতির সূর্যসন্তানদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভোরের প্রভাতফেরি পর্যন্ত শহীদ মিনারে ফুল অর্পণে নিয়ম পালনে কড়াকড়ি দেখা যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
এমইউএম/এমআইএইচ/এমএইচকে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।