ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিন্ডিকেটে বাড়ছে গরুর দাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
সিন্ডিকেটে বাড়ছে গরুর দাম সিন্ডিকেটে বাড়ছে গরুর দাম-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: ভারত থেকে চোরাইপথে আনা গরু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ছাড়পত্র দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে যে পরিমাণ গরু আসছে সে পরিমাণে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে গরু আটকে দিয়ে চাহিদার তুলনায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা যায়।

গাবতলীর পশুর বাজারে চাঁদাবাজির কারণেও গরুর দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি।

গরুর ব্যবসায়ীরা বাংলানিউজকে জানান, গরুর দাম বাড়ার মূল কারণ বর্ডারের সিন্ডিকেট। বাড়তি দামে গরু কিনে বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

গরুর ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ সরকার কোনো দিনই এলসি করে ভারত থেকে গরু আনতে পারেনি। আগে গরু আনতে ভারত সরকারের কোনো নিশেধাজ্ঞা ছিল না। তাই চোরাইপথে যত গরুই আসতো তার সবগুলোকেই ছাড়পত্র দিতো বাংলাদেশ কাস্টমস। কিন্তু, এখন ভারত সরকারের নিশেধাজ্ঞার কারণে এমনিতেই গরু আসে কম। আগে ১৭টি করিডোর দিয়ে গরু আসতো, এখন সাতক্ষীরার বৈখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুলতানগঞ্জ ও বাখর আলী করিডোর দিয়ে গরু আসে।

তিনি বলেন, যে পরিমাণ গরু আসে তার সব ছাড়পত্র দেয় না কাস্টমস। সিন্ডিকেটের কারণে ৫ হাজার গরু আসলে মাত্র ৫০০ গরু ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এভাবে চাহিদার তুলনায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় গরুর দাম অনেক বেড়ে যায়।

বর্তমানে গরু প্রতি ৫৬০ টাকা কাস্টমস ফি দিয়ে ছাড়াতে হয় উল্লেখ করে শহীদুল ইসলাম বলেন, বেশি করে গরু আসলে সরকারই লাভবান হয়। তাহলে গরুগুলো ছাড়ানো হচ্ছে না কেন?

আকবর আলী নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগে ভারত থেকে গরু আনতে বর্ডার পার করতে জোড়া প্রতি দিতে হতো ৮০০ টাকা। এখন দিতে হয় ৭৫ হাজার টাকা। তাহলে সেই টাকা কী ব্যবসায়ীরা পকেট থেকে দেবে?

এরপরও সব গরু কাস্টমস থেকে ছাড়পত্র না দেওয়ায় দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

পথে পথে গাড়ি প্রতি ২-৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় উল্লেখ করে আকবর আলী বলেন, বর্ডার থেকে গরু কেনার পর এখানে গরু আনতে যাতায়াত খরচ হয় ১৮-২০ হাজার টাকা। এছাড়া, পুলিশ আর নেতাদের পথে কমপক্ষে ১০-১২ জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। চাঁদার পরিমাণ সব মিলিয়ে ২-৩ হাজার টাকা।

তবে গাবতলী পশুর বাজারে কোনো চাঁদা দিতে হয় না উল্লেখ করে ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া বলেন, একটা গরু বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে। পরে ঢাকায় এসে আমাদের এই বাজারে থাকতে খরচ হচ্ছে। সব মিলিয়ে খরচ বাদ দিয়ে লাভ ধরেই একটা গরু বিক্রি করতে হয়।

চাঁদা দিতে না হলেও গাবতলী বাজারে গরুর ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি হাসিল (ফি) আদায় করতে দেখা গেছে।

সিটি করপোরেশন মহিষ প্রতি ৭০, গরু প্রতি ৫০, ছাগল প্রতি ১৫ টাকা হাসিল নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাজার কর্তৃপক্ষ পশুর দামের শ’প্রতি ৩ টাকা ৫০ পয়সা হারে হাসিল আদায় করছে।

ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ ১৮ হাজার টাকা দিয়ে দুইটি খাসি কিনেছেন। কত টাকা হাসিল দিয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ’ প্রতি সাড়ে ৩ টাকা হারে ৬৩০ টাকা হাসিল দিতে হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসিল কর্মকর্তা মো. সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশন যে দামটা নির্ধারণ করেছে সেটা ব্যবসায়ীদের জন্য। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য শ’প্রতি সাড়ে ৩ টাকা করে রাখা হচ্ছে।

মাংস ব্যবসায়ীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লাখ টাকার গরুর হাসিলে দুই-একশ টাকা কমিয়ে দিলেই কী কসাইরা ৩০০ টাকা কেজি মাংস খাওয়াতে পারবে? জায়গা মতো দাম কমলে, ঠিকমত গরু আসতে দিলেই মাংসের দাম কমবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
পিএম/এমএ/আরআর/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।