ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বগুড়া মহাসড়কে ৩৫ ‘ডেথস্পট’, ৬ দিনে ঝরলো ১১ প্রাণ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭
বগুড়া মহাসড়কে ৩৫ ‘ডেথস্পট’, ৬ দিনে ঝরলো ১১ প্রাণ বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনা/ছবি: আরিফ জাহান

মহাসড়ক ঘুরে: উত্তরে বগুড়ার বনানী। দক্ষিণে শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক হয়ে চলাচল করতে হয়। দ‍ূরত্ব হবে বড়জোর ৩০ কিলোমিটারের মতো। এরমধ্যেই রয়েছে ৩৫টি বিপজ্জনক স্পট। যাকে বলা যায় ‘ডেথস্পট’। মহাসড়কের এসব ডেথস্পটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই আছে।

সবশেষ ছয়দিনে এই ৩০ কিলোমিটারে ঝরে গেছে এগারোটি তাজা প্রাণ। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন ব্যক্তি।

নষ্ট হয়েছে লাখ লাখ টাকার সম্পদ।

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার যান। কিশোর ও অদক্ষ ব্যক্তিরা হিউম্যান হলারগুলোর চালকের আসনে। বাস-ট্রাক চালকরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন আরও বেপরোয়া।

সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য মরণ বাঁক। তবু সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হুঁশ ফিরে আসার আপতত কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গেলো ছয়দিনের পরিসংখ্যান অন্তত সেটাই বলছে।  
সর্বশেষ শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ এলাকায় একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে হয়।
সংঘর্ষে বাস ও ট্রাকের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে বাসের হেলপার ও চালক নিহত হন। আহত হন বাসের ১০জন যাত্রী। এ স্থানটি ডেথস্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বগুড়ার বনানী, বেতগাড়ী, লিচুতলা, সাজাপুর, টিএমএসএস ফিলিং স্টেশন, শাজাহানপুর নতুন থানা ভবন, উপজেলা পরিষদ, বর্তমান থানা ভবন, শাজাহানপুর বন্দর এলাকা, বি-ব্লক, আড়িয়া বাজার, নয়মাইল, শেরপুর উপজেলার জামালপুর, দশমাইল, গাড়ীদহ, দুগ্ধ ও প্রাণী উন্নয়ন খামার, মহিপুর বাজার, হাজীপুর, কলেজরোড, উপজেলা পরিষদ, আহলে হাদিস পাক মসজিদ, বাসস্ট্যন্ড, খেজুরতলা, ধুনটমোড়, হামছায়াপুর, কাঠালতলা, শেরুয়া, শেরুয়া বটতলা, মৎস্যখামার, ধর্মোকাম, যমুনাপাড়া, কৃষ্ণপুর, মদনপুর, মির্জাপুর, মির্জাপর রানীরহাটমোড় -এই ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগে আছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ও থানা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শাজাহানপুর উপজেলার দ্বিতীয় বাইপাস সড়কের বনানী লিচুতলা এলাকায় মালবাহী ট্রাক ও সিএনজি চালক অটোরিকশার সংঘর্ষে সিএনজি অটোরিকশা চালকসহ তিনজন নিহত হন। আহত হন তিনজন।
একইদিন দুপুরে শেরপুর উপজেলার মালবাহী ট্রাক ও ভটভটির সংঘর্ষে একজন চাল ব্যবসায়ী নিহত হন। এ ঘটনায় তিনজন আহত হন।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের রাজাপুর এলাকায় অবস্থিত একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে মোটরসাইকেল ও তেল বহনকালী লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে এইচএসসি পরীক্ষার্থী দুই বন্ধু নিহত হন।

একইদিন বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে সিএনজি চালিত একটি অটোকিশাকে রক্ষা করতে গিয়ে স্কুলবাস চাপায় এক পথচারী নিহত হন।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শাজাহানপুর উপজেলার মহাসড়কের মাঝিরা মৎস্য আড়তের সামনে মালবাহী ট্রাকের চাপায় এক কিশোর পথচারী নিহত হয়।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ ‍সুপার (এসপি) মো. ইসরাফিল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো দুঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া মহাসড়কের আবারো তিন চাকার যান চলাচল বেড়ে গেছে। এর কারণেও ‍দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, মহাসড়কের চিহ্নিত দুর্ঘটনাকবলিত স্থানগুলোয় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিডগান নিয়ে অভিযান জোরালো করা হয়েছে। আগে এ অভিযান দিনের বেলায় করা হতো। ঝুঁকি থাকলেও এ অভিযান এখন রাতেও পরিচালনা করা হচ্ছে।

পাশাপাশি মহাসড়কে তিনচাকার যান চলাচল বন্ধে সর্বোচ্চ অভিযান ‍শুরু করা হবে। এজন্য সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মনে করেন ঊর্ধ্বতন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭
এমবিএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।