ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কমলাপুর ওভার ব্রিজ এখন হকারদের আস্তানা

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
কমলাপুর ওভার ব্রিজ এখন হকারদের আস্তানা ফুটওভার ব্রিজ দখল করে ব্যবসা, ছবি: সুমন

ঢাকা: বিকেল পেরিয়ে তখন প্রায় সন্ধ্যা। সিঁড়ি দিয়ে কমলাপুর ফুটওভার ব্রিজে উঠতেই শোনা গেল ‘ন্যান ভালো বেল্ট আছে, আসেন ভাই কি বেল্ট লাগবো, দেখেন ভালো বেল্ট আছে।’ এভাবেই পথচারীদের ডাকছেন ‘বেল্ট’ দোকানি মতিউর।

ফটো-সাংবাদিকদের দেখে ‘খাইছে’ শব্দটি মুখ থেকে বের করেই পাশের দোকানের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। পথচারী বেশে কথা বলতেই মতিউর বললেন, ‘ভাই দেখেন ছবি নিচ্ছে, কালকেই আমাদের এখান থেকে তাড়াবো।

এরা গরিবের পেটে লাথি মারবো, আর কি?’

ওভার ব্রিজের সামনে-পেছনে দেখা গেল কোথাও দু’পাশে আবার কোথাও একপাশে বসে মাছ-শুঁটকি, চাল-ডাল, পেঁয়াজ-মরিচ, শীতকালীন শাকসবজি, আপেল, ফল, ঘড়ি, কাপড়, ইলেক্ট্রনিকস পণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস বিক্রি করছেন হকাররা। ৪’শ-৫’শ হাত ব্রিজের মধ্যে গুনে দেখা গেল, ৮৭ জন হকার বসেছেন তাদের বিক্রয় পণ্য নিয়ে। দেখে মনে হলো এ যেন হকারদের আস্তানা।

ফুটওভার ব্রিজে হকারদের আস্তানা, ছবি: সুমন
 হকাররা জানান, এখানে দেড় শতাধিক হকার ব্যবসা করেন। নিয়মিত ফুটওভার ব্রিজের দুই পাশেই বসেন তারা। কথা হয় মতিঝিল এজিবি কলোনির বাসিন্দা আরিফুর রহমানের সঙ্গে।

মুদগায় মেয়ের কোচিং হওয়ায় প্রতিদিন এই পথে আসা-যাওয়া তার। তিনি বলেন, ছুটির দিনে একটু স্বাচ্ছন্দে আসা-যাওয়া করা যায়। কিন্তু সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে ধাক্কাধাক্কি করে ফুটওভার ব্রিজ পার হতে হয়।
 
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন নারী ও শিশুরা। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আশিক বাংলানিউজকে বলেন, এখানে পকেটমার ও ছিনতাইয়ের কারণে আরামবাগের কোচিংয়ে পড়া বন্ধ করে দিয়েছি। এখানে দিনেরবেলা আমার ফোন ছিনতাই হয়েছে। আমি রেলওয়ে থানায় অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ওভার ব্রিজ দিয়ে ঠেলাঠেলি করে পথ চলা, ছবি: সুমনতার মতোই কামলাপুর, মুগদা, মান্ডা, বৌদ্ধমন্দির, মায়াকানন, বাসাবো, আহম্মদবাগসহ আশপাশের এলাকার মানুষ প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হকারদের নিয়ন্ত্রণ করেন কমলাপুর রেলওয়ের লাইনম্যান নূর নবী। জনপ্রতি হকারের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা নেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার দিকে টাকা তুলেন তিনি।

হকার খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, মতিঝিল, গুলিস্তান এবং পল্টন এলাকার হকারদের উচ্ছেদের ফলে হকারের সংখ্যা বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার যেভাবে ফুটপাতে ব্যবসা বন্ধ করছে কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ওভারব্রিজের এই ব্যবসাও বন্ধ করে দেবে।

খিরা ২০, শালগম ১০, মূলার কেজি ১০ টাকা বলে চিৎকার করে সবজি বিক্রি করছেন রতন মিয়া। ৩ বছর ধরে এখানে সবজি বিক্রি করছেন তিনি। রতন বলেন, ‘এই জন্য দিনে ১০০ টাকা করে চাঁদা দেই লাইনম্যানকে। ’

অন্য কাউকে চাঁদা দিতে হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে নেতাদের খাওয়া নেই। নেতাদের কথা পুলিশ শুনে না। তাই আমরা সরাসরি লাইনম্যানকে টাকা দিই তিনি পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেন। ’

মেয়ের অসুস্থতার কারণে ২০ দিন পর দোকান খুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এখানকার একমাত্র শুঁটকি ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এখানে ব্যবসা করে সুখ নেই, দৌড়ের ওপর থাকতে হয়, কখন তুলে দেয়।

চাঁদা দেন না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাঁদা তো প্রতিদিন দিই, তারপরও হঠাৎ পুলিশ হানা দেয়। ’

ঢাকা রেলওয়ে থানার এসআই (কমলাপুর) শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হকার উচ্ছেদের বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দেখেন। তারা আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নিই।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
এমএফআই/আরআর/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad