ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আমার মতো কেউ দ্রুত সফল হয়নি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
আমার মতো কেউ দ্রুত সফল হয়নি ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও আবেদ মনসুর / ছবি: রাজিন চৌধুরী

ঢাকা: ‘চিত্রনায়ক রাজ্জাক-আলমগীর ছাড়া আর কেউ আমার মতো এতো তাড়াতাড়ি সফল হয়নি। রাজ্জাক-আলমগীরকে সিনেমায় রিকশা চালাতে চালাতে বড়লোক হতে দেখেছি। আমি তেমন দ্রুতই সফল হয়েছি।’

বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও আবেদ মনসুর।
 
রবি, সিটিসেল ও জিএসকে’র কয়েকজন মানুষের কাছে ঋণী।

তারা তাকে অফুরন্ত সাহায্য করতেন। তাদের সহযোগিতায় এতো দ্রুত উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
 
বৈচিত্র্যময় জীবন তার। জীবনে কোনোদিনই অংকে পাকা ছিলেন না। নবম শ্রেণিতে অংকে তিনবার ফেল করেন। সবসময় নাকি অংক মুখস্ত করে পাস করেছেন। এসএসসি পরীক্ষাতেও মুখস্ত করে অংক পরীক্ষা দিয়েছেন। সাতাশি মার্কের অংক মুখস্ত করে তিরাশি মার্কের উত্তর দিয়েছিলেন।
 
আর তাতেই অংকসহ সব বিষয়ে লেটারমার্ক নিয়ে সারাদেশের মধ্যে মেধা তালিকায় স্থান করে নেন রংপুর ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে।
 আবেদ মনসুর
খুব সাধ ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার। কিন্তু দু’দফায় পরীক্ষা দিয়েও ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেননি। ঘুরতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা, আর সেখানেই উচ্চতর ডিগ্রি নেন।
 
জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু ধৈর্যহারা হননি। কখনও কখনও কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু হাল ছাড়েননি। এমনকি কারও কাছে হাত পাতেননি তিনি।
 
এমনও দিন গেছে যখন একটি সিগারেট চারবার জ্বালিয়ে খেয়েছেন কিন্তু হাত পাতেননি কারও কাছে। চেষ্টা করে গেছেন নিজেই কিছু করার। আর এতেই তিনি সফলতার শিখরে উঠে গেছেন তরতর করে।
 
প্রথম জীবনে টিভি সিরিয়াল ম্যাকগাইভার দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হন। ম্যাকগাইভার যেভাবে কখনও পাইলট, কখনও নাবিক, কখনও দক্ষ প্রকৌশলী, কখনও ডাক্তারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন- নিজেকেও সেইরকম ভাবতে থাকেন।
 
শেষ পর্যন্ত সেসব তার আর হয়ে ওঠা হয়নি, হয়েছেন ব্যবসায়ী। কিন্তু ম্যাকগাইভারের মতোই তাকে নানান ক্ষেত্রে বিচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। প্রথমে ব্যবসা শুরু করেছিলেন ভিনাইল ডিজিটাল দিয়ে।

আবেদ মনসুর
 
যেখানে ব্যানার ও গিফট আইটেম তৈরি করা হতো। বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। তাদের পরামর্শেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওওএইচ লিডার স্থাপন করেন।
 
এরপর একে একে প্রতিষ্ঠা করেন ফ্যাশন হাউজ গলফার, বায়িং হাউজ ফ্যাশন পার্ক, আমদানি-রফতনি প্রতিষ্ঠান ডাটা কমিউনিকেশন, এগ্রো ফার্ম ‘ফামার্স’, ক্রিয়েটিভ হাউজ ‘সেফ এন্ড ডিজাইন’।
 
ব্যবসার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী কাজে তার মনোযোগের কমতি ছিলো না। এজন্য প্রতিষ্ঠান করেন ‘রিকভার’। যার কাজ হচ্ছে গরীব ও দুস্থদের পুনর্বাসন করা।
 
একসময় নাম লিখিয়েছিলন টিভি নাটক প্রযোজনায়। তার প্রযোজিত নাটক ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ প্রচারিত হয় এটিএন বাংলায়। এরপর আরটিভিতে প্রচারিত হয় ‘বিফোর দ্য লাভ’ এবং এনটিভিতে ‘বুমেরাং’।
 
কিন্তু এখানে নিন্দুকের নানা কানাঘুঁষা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেন। তৈরি করেন সাকসেসটেল’র অ্যাড। ডকুমেন্টারি তৈরি করেন এসএসএফকে নিয়ে।
 
ব্যবসার কারণে বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করতেন। একইভাবে বিদেশি বায়াররাও তার কাছে আসা-যাওয়া করেন। বায়াররা বিমানবন্দর রোড দিয়ে যাতায়াতের সময় অব্যবস্থাপনা নিয়ে কটাক্ষ করতেন। বিষয়টি তার আত্মমর্যাদায় বাধে। সেই থেকে পণ করেন, সুযোগ পেলে নিজ খরচে এই সড়কটাকে সাজিয়ে তুলবেন। যেনো বিদেশিদের কাছে লজ্জায় মাথা নিচু না হয়।
 
কিন্তু বিলবোর্ডের কারণে তার মন সায় দিত না। গত বছর যখন বিলবোর্ডে সরিয়ে রাস্তাটি পরিষ্কার করা হয়, তখনই দ্রুত সড়ক বিভাগে যোগাযোগ করে তার আগ্রহের কথা জানান।
 
সড়ক বিভাগও তার প্রস্তাবে সায় দিলে পা বাড়ান দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পুরণের জন্য। তার ইচ্ছা, দেশটাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা। অনেকে যখন সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি-ফিকিরে ব্যস্ত, তখন আবেদ মনসুর পুরো টাকাই খরচ করবেন ব্যক্তিগত তহবিল থেকে।
 
বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারের উন্নয়নে প্রায় নব্বই কোটি টাকা খরচ হবে তার। সড়কটিকে সাজিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হচ্ছে নানা জাতের বৃক্ষরাজি। শুধু লাগিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত দেননি। আগামী দশ বছর পরিচর্যার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এতে ব্যয় হবে আরও পঞ্চাশ কোটি টাকা।
 
শুধু টাকা ঢেলেই দায় সারেননি আবেদ মনসুর। সকাল ৬টায় আসেন এই সড়কে, থাকেন গভীর রাত পর্যন্ত। কোনো কোনদিন রাত দুইটা পার হয়ে যায় বাসায় ফিরতে। আবার সকালে এসে কাজের লোকদের ডেকে তোলেন। উদ্দেশ্য, কাজটি দ্রুত এগিয়ে নেওয়া।

পাল্টে যাচ্ছে বনানী-এয়ারপোর্ট সড়ক
 
এজন্য নিজের বাসা ছেড়ে কাছাকাছি এলাকায় ভাড়া বাসায় উঠেছেন আবেগতাড়িত আবেদ মনসুর। দেশটাকে সবুজে ঢেকে দিতে চান। এজন্য যখন সুযোগ পেয়েছেন তখনই গাছ লাগিয়েছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কোটি গাছের চারা লাগিয়েছেন বিভিন্ন সড়কে।
  
জীবনের প্রথম পুঁজি ছিলো মায়ের দেওয়া ১৩ লাখ টাকা। এরপর ব্যবসা যখন কিছুটা বুঝে ওঠেন তখন বাবা দিয়েছেন ২৭ লাখ টাকা। পাশাপাশি প্রয়োজনে ইতালি প্রবাসী চাচার কাছ থেকে ধার-দেনা করতেন।

স্বপ্ন দেখেন গ্রিন বাংলাদেশের। তিনি মনে করেন, কোনো ব্যক্তিকে যদি দশটি নার্সারি থেকে খুঁজে দশটি ভিন্ন রকমের চারা কিনে আনতে বলা হয়, তিনি যদি দশটি নার্সারি যান এবং সেই চারা নিজ হাতে লাগান- তাহলে তিনি বৃক্ষপ্রেমী হয়ে যাবেন। রাস্তার ধারে বাগান বা নার্সারি দেখলে ‍উপেক্ষা করতে পারবেন না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
এসআই/এসএনএস

** রেলস্টেশন, এয়ারপোর্ট ও সিটি বিউটিফিকেশনের প্লান আবেদ মনসুরের

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।