ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

জীবন বাঁচানো ঢোপকল এখন ‘ঐতিহ্য’!

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
জীবন বাঁচানো ঢোপকল এখন ‘ঐতিহ্য’! ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: পানির অপর নাম জীবন। তাই নিজ গর্ভ থেকে উদার চিত্তে তৃষ্ণার্ত মানুষকে পানি দিয়ে অতীতে রাজশাহীবাসীর জীবন রক্ষা করেছিল ঢোপকলগুলো।

কিন্তু সময়ের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ঢোপকলগুলো এখন কেবলই ‘ঐতিহ্য’! তবে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো রক্ষার উদ্যোগ নেই।
 
এ নিয়ে হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহাবুব সিদ্দিকী বলেন, রাজশাহী নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য একসময় প্রসিদ্ধ ছিলো এই ঢোপকল। সেসময় রাজশাহী শহরে পানযোগ্য পানির খুব কষ্ট ছিলো।  

‘তখন বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব ছিলো। এতে কলেরা-আমাশয়সহ পেটের নানান অসুখ ছড়িয়ে পড়েছিল। বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুও হয়েছিল। এজন্য ঢোপকলগুলো সবার স্মরণে আছে। এখন যা রাজশাহীর ঐতিহ্য। কিন্তু অন্য ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনের মতো ঢোপকলগুলোও এক এক করে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ’

রাজশাহীর ইতিহাসের পাতা ঘেটে মাহাবুব সিদ্দিকী বলেন, ১৯৩৪-৩৯ সাল পর্যন্ত রায় ডিএন দাশগুপ্ত রাজশাহী পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই সময় তিনি রাজশাহী নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে পানির কল স্থাপন করা হবে।  

১৯৩৭ সালের আগস্ট মাসের কোনো এক দিনে মিনিস্ট্রি অব ক্যালকাটার অধীনে রাজশাহী ওয়াটার ওয়াকর্স নামে পানি সরবরাহ ও বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এই কাজে নামকরা ধনীদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধও করা হয়। সেই সূত্র ধরে পুঠিয়ার মহারানি হেমন্ত কুমারী নিজেই দান করেন প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। বিশাল অঙ্কের একক অনুদানে এই ঢোপকলগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়।  

আর এ কারণে রাজশাহী জেলা বোর্ডের দান করা জমিতে পুঠিয়ার মহারানি হেমন্ত কুমারীর নামেই ওয়াটার ওয়ার্কস স্থাপিত হয়। কালক্রমে রানি হেমন্তকুমারী ঢোপকল নামেই পরিচিত হতে থাকে। বেশিরভাগই ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে অবশিষ্টগুলো আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।  

রাজশাহীর বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ড. তসিকুল ইসলাম রাজা বলেন, ২০১০ সালের দিকেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০টি ঢোপকল ছিলো। তবে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ না খাওয়ায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এসব ঢোপকলের বেশিরভাগই ভেঙে ফেলেছে।  

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ মে মহানগরীর চণ্ডীপুর এলাকায় একটি ঢোপকল অপসারণ করা হয়। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাস্তা চওড়া করার জন্য এটি অপসারণ করতে হয়েছে। তবে ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ঢোপকলগুলো জাদুঘরে রাখা হবে। কিন্তু বাস্তাবে সেই কাজটি হয়নি আজও।

তিনি বলেন, এই ঐতিহ্যগুলো রক্ষার জন্য অতিসত্বর রাজশাহীতে একটি নগর জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এছাড়া রাজশাহীতে যেসব ঐতিহাসিক নিদর্শন এখনও টিকে রয়েছে সেগুলো আর রক্ষা করা যাবে না।  

এজন্য সবার আওয়াজ তোলা দরকার বলেও মনে করেন রাজশাহীর এই ইতিহাস গবেষক।  

ঢোপকলগুলোর ঐতিহ্য সংরক্ষণ প্রশ্নে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, আধুনিক যুগে প্রায় সব বাড়িতেই পানি সরবরাহ আছে। ব্যবহার না থাকায় এই ঢোপকলগুলোর সবই অচল হয়ে গেছে। এছাড়া রাস্তা সম্প্রসারণকালে পর্যায়ক্রমে ঢোপকলগুলো ভাঙা হয়েছে।  

এর পরও অবশিষ্ট ঢোপকলগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রদর্শনীর জন্য বরেন্দ্র জাদুঘরে দু’টি ঢোপকল বসানো হয়েছে। নগরীর সিএন্ডবি মোড় থেকে ডিআইজি অফিস পর্যন্ত প্রদর্শনীর জন্য তিনটি এবং কাজলায় মাহবুর রহমানের আর্কাইভে একটি রাখা হয়েছে। এছাড়া অবশিষ্ট ঢোপকলগুলো নিয়ে শিগগিরই শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানে স্থাপন করা হবে। ঐতিহ্য রক্ষার জন্যই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন রাসিক’র এই প্রধান প্রকৌশলী।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
এসএস/এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।