ঢাকা, বুধবার, ৫ ভাদ্র ১৪৩২, ২০ আগস্ট ২০২৫, ২৫ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

সুস্বাদু পাহাড়ি খাবার ‘বাঁশ কোড়ল’

সাইফুল আলম বাবলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:২৬, জুন ৩০, ২০১৬
সুস্বাদু পাহাড়ি খাবার ‘বাঁশ কোড়ল’ ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান: বান্দরবানসহ পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসীদের অন্যতম ‍জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার ‘বাঁশ কোড়ল’। মারমারা একে বলে ‘মহ্ই’ আর ত্রিপুরাদের কাছে ‘মেওয়া’।

চাকমা ভাষায় বলা হয় ‘বাচ্ছুরি’।  

মূলত বাঁশের গোঁড়ার কচি নরম অংশকে বলা হয় বাঁশ কোড়ল। পার্বত্যাঞ্চলের প্রায় সব স্থানেই মেলে এ সবজি। দেশের বিভিন্ন স্থানেও এটি এখন জনপ্রিয় একটি খাবারের নাম।  

বছরের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এ সবজির ভরা মৌসুম থাকে। পার্বত্য বিভিন্ন অঞ্চলে মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়।  

বর্ষার শুরুতে বৃষ্টির পানিতে মাটি নরম হলে এটি বাড়তে শুরু করে। মাটি হতে ৪-৫ ইঞ্চি গজিয়ে উঠলে এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। বিভিন্ন জাতের বাঁশ কোড়ল স্বাদে ভিন্ন। তবে মুলি বাঁশ কোড়ল সবচেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় সবার কাছে এটি জনপ্রিয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা ও দাম কিছুটা বেশি।  

বর্ষার শুরুতেই প্রায় প্রতিদিন  বিকেলে জেলা শহরের মার্মা বাজারে আদিবাসী ব্যবসায়ীরা বাঁশ কোড়ল নিয়ে আসেন। এখানে কোড়ল কিনতে আসেন সব জাতি-গোষ্ঠীর ক্রেতারা। প্রতি কেজি বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায় ৮০-১০০ টাকার মধ্যে। তবে চাহিদা অনুযায়ী এর দাম কম-বেশি হয়ে থাকে।  

বর্তমানে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ সবজি। পার্বত্যাঞ্চলে ঘুরতে আসা পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণ এটি।

এ সবজি বিক্রি করে সাবলম্বী হচ্ছে পাহাড়ের বিভিন্ন দূর্গম পল্লীর বহু মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে মাথায় থ্রুং (বিশেষ ঝুড়ি) বেঁধে বাজারে আনা বাঁশ কোড়লের পসরা সাজিয়ে বসেন আদিবাসী নারীরা।  

মার্মা বাজারে বাঁশ কোড়ল বিক্রি করতে আসা আদিবাসী নারী মলি প্রু মার্মা বাংলানিউজকে জানান, পাহাড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক কারণেও বাঁশবন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাঁশ কোড়ল এখন অপ্রতুল। সরকারি ভাবে বাঁশবন সংরক্ষণ করা না গেলে একসময় পার্বত্যাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাবে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ, সেইসঙ্গে বাঁশ কোড়ল।  

বান্দরবান সদরের ছাইংগ্যা, ডলুপাড়া, বাঘমারা, হানসামা পাড়া, তালুকদার পাড়া থেকে আসা বিক্রেতা শান্তি রাণী চাকমা, রত্না তঞ্চঙ্গ্যা, প্রভাতি তঞ্চঙ্গ্যাসহ কয়েকজন আদিবাসী ব্যবসায়ী জানান, তারা প্রতি হাটবারে প্রায় ২০০ আঁটি বাঁশ কোড়ল বাজারে আনেন। প্রতি আঁটি ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালিদের কাছেও এ সবজি বেশ জনপ্রিয়।  

স্থানীয় আদিবাসী গবেষক সিংইয়ং ম্রো জানান, বান্দরবানে কয়েক প্রজাতির মূল্যবান বাঁশ জন্মায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডলু, কাতি, মিতিঙ্গা, মুলি, কালী ও ছোটিয়া। মূলত বছরের জুন-আগস্ট মাসে বর্ষা মৌসুমে বাঁশের বংশ বৃদ্ধি হয়। এ সময় পাহাড়ের গায়ে মাটি ভেদ করে উঠতে শুরু করলে পাহাড়িরা তা সংগ্রহ করে বাজারজাত করেন।

স্থানীয়রা জানান, স্যুপ, মুন্ডি, মাংস দিয়ে রান্না ও ভাজি করে খাওয়া যায় বাঁশ কোড়ল। দিন-দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় বাঁশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ফলে সম্প্রতি পার্বত্যাঞ্চলে পর্যাপ্ত বাঁশ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাঁশবন রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে জুন-আগস্ট পর্যন্ত বাঁশ কোড়ল আহরণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।

বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম জানান, পাহাড়ে গাছপালা কমে যাওয়ায় পানির স্তর অনেকটা নিচে নেমে গেছে। ফলে পাহাড়ে বাঁশ উৎপাদন তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তাছাড়া অপরিকল্পিত জুম চাষ, নির্বিচারে মাটি ও পাথর উত্তোলনের ফলে ঝিড়ি-ঝরনা শুকিয়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে ধীরে ধীরে বাঁশ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।  

তাছাড়া সারাদেশে বাঁশের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লোভে নির্বিচারে বাঁশ পাচার করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
এসআই/এসআর
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।