ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

আইলার এক বছর পরও দুর্ভোগ ছাড়েনি

মোস্তাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৭ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১০

সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডবের এক বছর পূর্তি হয়েছে গেল ২৫ মে। অথচ এ প্রলয়ঙ্করি ঝড়ের শিকার অনেক এলাকার মানুষ আজো সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর এমনই একটি উপজেলা। উপজেলার আইলা দুর্গত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি। আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমানের কলমে সরেজমিন প্রতিবেদন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ৩১ গ্রামের ওপর দিয়ে এখনো জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের ১০টি কোজারের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় পাশের খোলপেটুয়া নদীর পানি ঢুকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

আর এ কারণে এ এলাকার দুই ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষও তাদের বসতভিটায় ফিরতে পারছে না। এমনও অনেকে আছেন যারা তাদের বসতভিটায় বসবাসের আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের স্থান হয়েছে বেড়িবাঁধের ওপর।

গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স ম শফিউল আযম লেনিন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, “ ঘূর্নিঝড় আইলায় ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের ২৬টি পয়েন্ট ভেঙে যায়। আইলা আঘাত আনার দেড় মাসের মধ্যে ধসে পড়া ২০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু চকবারা, খলিসাবুনিয়া, জেলিয়াখালী, নয় নম্বর সোরাসহ ৬টি কোজার নির্মাণে সাতীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড গত এক মাস আগে কার্যাদেশ দিলেও ঠিকাদাররা ওই কাজ এখনো শুরু করেনি। ”

এতে গাবুরা ইউনিয়নের ১৫ টি গ্রাম খোলপেটুয়া নদীর সঙ্গে মিশে গেছে।

চেয়ারম্যান আরো জানান, তার ইউনিয়নের ৬ হাজার ২৭৩টি পরিবারের প্রায় ৩১ হাজার আইলা দুর্গত মানুষ বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছে। তারা এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি। গাবুরা ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ এরই মধ্যে এলাকায় বসবাসের আশা ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছেন। এলাকার স্কুল-কলেজ পানিতে তলিয়ে থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চিত্রও একই। ইউনিয়নের ঝাপা, চণ্ডিপুর, গড়কুমারপুর, কালিতলা ও চাউলখোলা বেড়িবাঁধের কোজার নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। ফলে ওই ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের সবকয়টি গ্রাম এখনো পানির নিচে। প্রায় ৬ হাজার পরিবারের ৩২ হাজার মানুষ আইলা দুর্গত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, বর্ষা মৌসুমের আগে এসব নির্মাণ কাজ শেষ করা না হলে পরে এগুলো আর নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। ফলে এই দুটি ইউনিয়নের ৩১ গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে এলাকার হাজার হাজার মানুষ।

এ ব্যাপারে সাতীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, “গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের অসমাপ্ত ১০টি কোজার নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হলেও ঠিকাদাররা ঠিকমত কাজ করছে না। সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারদেরকে লিখিত ভাবে কাজ শুরু করার জন্য বলা হয়েছে। তারা কাজ শুরু না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”

সাতীরা জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ জানান, বেড়িবাঁধের কোজার নির্মাণের কাজ সেভাবে হচ্ছে না। ১০টি কোজার নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ১৩ কোটি টাকার কার্যাদেশ দিয়েছে। তবে নির্মাণ কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।

বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ ভিজিএফ, ভিজিডি দেওয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১০
প্রতিনিধি/কেএল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।