ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাতক্ষীরায় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা স্থবির: নিরাপত্তাহীনতায় বাদী-সাক্ষ

মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১১
সাতক্ষীরায় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা স্থবির: নিরাপত্তাহীনতায় বাদী-সাক্ষ

সাতক্ষীরা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সাতক্ষীরায় এখন পর্যন্ত মোট ২৪টি মামলা দায়ের হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব মামলার নথিপত্র হস্তান্তর হওয়ার পর থেকেই এর সকল কার্যক্রম থমকে পড়েছে।

ফলে সাধারণ মানুষের এসব মামলাগুলি নিয়ে যে আগ্রহ ছিল, তা হারাতে বসেছে। তা ছাড়া মামলার বাদী ও সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

সূত্র মতে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের অন্যান্য এলাকার মতো সাতক্ষীরাতেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিগুলো। বিষয়টি নিয়ে মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন ও সমাবেশ করে সরকারের কাছে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার দাবি করেন তারা।

সাতক্ষীরায় জামায়াতের সাবেক একজন সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্থরা ৬ থানায় ২৪টি মামলাও দায়ের করেন।

এর মধ্যে সদর থানায় ২টি, আশাশুনিতে ৫টি, কলারোয়ায় ৩টি, কালিগঞ্জে ২টি, দেবহাটায় ৩টি ও শ্যামনগরে সর্বাধিক ৯টি মামলা দায়ের হয়।

২৪ মামলায় আসামি করা হয় ১৮১ জনকে। এর মধ্যে ৮৭ জন উচ্চ আদালত থেকে অগ্রিম জামিন গ্রহণ করে। তবে মামলার পর ৬ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জামিন ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় ৯৩ জন আইনের আওতায় আসলেও এ মামলার অপর ৮৮ আসামি জামিন ও গ্রেপ্তার ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। এমনকি প্রকাশ্যে তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় অবস্থান করছে বলে অভিযোগ।

সাতক্ষীরা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সরকারের নির্দেশে গত ১৪ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী ২৪ মামলার নথিপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে হন্তান্তর করা হয়েছে।

একই সাথে নতুন কেউ যুদ্ধাপরাধীর মামলা দায়ের করতে চাইলে আদালত বা থানাকে ওই মামলার সমুদয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠাতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে যুদ্ধাপরাধীর এ সমস্ত মামলার কোনো আসামিকে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না। ফলে যুদ্ধাপরাধীর মামলায় প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তাদের কোনো কার্যক্রম না থাকায় তা বেশ কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে।

সূত্র মতে, সরকার ঘোষিত ৪০ যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলামের নাম থাকলেও তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে কেউ মামলা দায়ের করেনি।

অন্যদিকে মামলাগুলির কার্যক্রম থমকে থাকায় প্রভাবশালী আসামিদের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে বাদী ও স্বাক্ষীরা।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার ইনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে যুদ্ধাপরাধীর মামলাগুলি নিয়ে কোনো কিছু না করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। পরবর্তী আদেশ পেলে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে শুনেছি। ’

এ বিষেয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাতক্ষীরায় দায়েরকৃত মামলাগুলির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আলোচিত মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। পরবর্তীতে জেলা পর্যায়ে দায়েরকৃত এসব মামলার কার্যক্রম শুরু হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad