ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে ইতিহাস গড়ছে খুলনা শিপইয়ার্ড

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৫
যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে ইতিহাস গড়ছে খুলনা শিপইয়ার্ড ছবি: মানজারুল ইসলাম / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: চৌদ্দ শতকে মরক্কোর পরিব্রাজক ইবনে বতুতা যুদ্ধ জাহাজ ও সৈন্য-সামন্তসহ বাংলার বিভিন্ন বন্দরে আগমন করেছিলেন। তখন হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি এদেশেই একদিন তৈরি হবে যুদ্ধজাহাজ।

সেই বিষয়টিই এখন একের পর এক ঘটছে দেশের শিপইয়ার্ডগুলোতে। তৈরি হচ্ছে যুদ্ধ জাহাজ। বিশেষ করে খুলনা শিপইয়ার্ড দেশে প্রথমবারের মতো বড় যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ করে গড়তে যাচ্ছে নতুন ইতিহাস। নৌ-বাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে দেশে জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছে প্রতিষ্ঠানটি।

খুলনা শিপইয়ার্ড আধুনিক কনটেইনারবাহী জাহাজ তৈরির পাশাপাশি তৈরি করছে এসব যুদ্ধজাহাজ। ২০১৩ সালে পাঁচটি ছোট যুদ্ধজাহাজ (পেট্রোল ক্রাফট) তৈরি করে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নতুন অধ্যায় শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার বড় আকারের অত্যাধুনিক দু’টি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ কাজ শুরু করছে তারা। সশস্ত্র বাহিনীতে এগুলো লার্জ পেট্রোল ক্রাফট বা এলপিসি নামে পরিচিত। চীনের যুদ্ধজাহাজ বিশেষজ্ঞরা এতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছেন।
দেশের মাটিতে বড় যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের উদ্যোগ এটাই প্রথম। আর এসব যুদ্ধজাহাজের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করতে ৬ সেপ্টেম্বর খুলনায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই দিন প্রধানমন্ত্রী মংলায় নির্মিত দু’টি জাহাজের উদ্বোধন শেষে নৌবাহিনীতে সংযুক্ত (কমিশনিং) করবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সমগ্র শিপইয়ার্ডে এখন সাজ সাজ রব।

শিপইয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, লার্জ পেট্রোল ক্রাফট প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৬৪ দশমিক ২ মিটার এবং প্রস্থ ৯ মিটার। এর গভীরতা হবে ৪ মিটার। সমুদ্রপথে ঘণ্টায় ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলবে। জাহাজে একসঙ্গে ৭০ জন থাকতে পারবেন। শুরুর দুই বছরের মধ্যে যুদ্ধ জাহাজের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর সৈয়দ ইরশাদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ১৯৫৭ সাল তথা আজ থেকে ৫৭ বছর আগে তার যাত্রা শুরু করেছিল। পরবর্তীতে আশি দশকের পর নানামুখী অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সম্ভাবনাময় এ প্রতিষ্ঠানটি রুগ্ন শিল্পে রূপ নেয়। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অলাভজনক, রুগ্ন ও ৯৩.৩৭ কোটি টাকা দেনায় থাকা এ শিপইয়ার্ড পরিচালনার দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে। সরকার তথা দেশবাসীর সে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ এ ইয়ার্ডের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে এ ইয়ার্ড আধুনিক কনটেইনারবাহী জাহাজ তৈরির পাশাপাশি তৈরি করছে যুদ্ধজাহাজ।

তিনি জানান, ৬ সেপ্টেম্বর খুলনা শিপইয়ার্ড তথা নৌবাহিনীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। ওই দিন প্রথমবারের মতো দেশিয় শিপইয়ার্ডে দু’টি অত্যাধুনিক লার্জ পেট্রোল ক্রাফট (এলপিকে) নির্মাণের কাজ সূচনা হবে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দেশের অগ্রযাত্রায় এ হবে আরও এক নতুন এবং গৌরবোজ্জ্বল মাইল ফলক।

সৈয়দ ইরশাদ আহমেদ বলেন, ২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী খুলনা শিপইয়ার্ডেই সর্বপ্রথম দেশের মাটিতে পাঁচটি যুদ্ধ জাহাজ তথা পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণের কিল লেইং করেছিলেন। খুলনা শিপইয়ার্ড অত্যন্ত সফলভাবে ২০১৩ সালের মধ্যে সেই পাঁচটি পেট্রোল ক্র্যাফট নির্মাণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে।

এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় খুলনা শিপইয়ার্ড এবার নির্মাণ করতে যাচ্ছে আরও বড় আকারের অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ তথা লার্জ পেট্রোল ক্রাফট (এলপিকে)। আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ শিপ বিল্ডিংয়ের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।

তিনি জানান, খুলনা শিপইয়ার্ড আজ ক্রম উন্নয়নশীল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এ ইয়ার্ডের শ্রমিকদের আত্মবিশ্বাস ও পরিশ্রম এবং প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাপূর্ণ ভাবমূর্তি অবারিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে।

সরকারের শিল্পবান্ধব ও বাজারমুখী নীতিমালা, উৎপাদনের মান নিশ্চিতকরণ, কেনাকাটার স্বচ্ছতা ও সর্বোপরি সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরলস প্রচেষ্টায় কারণে এ ইয়ার্ডকে আজ আর পেছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৫
এমআরএম/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad