ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিনোদনে চমক আনতে চান রইস উদ্দিন

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৫
বিনোদনে চমক আনতে চান রইস উদ্দিন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘ছেলেটি একটু আনন্দের জন্য প্রায়ই যেত গুলশানের ওয়ান্ডারল্যান্ডে। সেই পার্ক গুড়িয়ে দেওয়ার পর মন খারাপ করে ছেলে একদিন বললো- বাবা, ওয়ান্ডারল্যান্ডের মতো কি তুমি একটা পার্ক বানাতে পারো না! সন্তান বাবার কাছে যেভাবে বায়না ধরে আর কী!’

এক মেয়ে তিন ছেলের মধ্যে নাজিম উদ্দিন মাইম মেঝ।

পড়ে ক্লাস ফাইভে। ছেলের বায়না মেটাতে মন কেমন যেন অস্থির হয়ে যায় বাবার।

‘আমি করি কেমিক্যালের ব্যবসা। পার্ক কিংবা বিনোদন ব্যবসা সম্পর্কে আমার নূন্যতম কোনো ধারণা নেই। তারপরও পার্ক করার ব্যাপারে ছেলের বায়নার সুরটি মনে হলো আরও অনেক শিশু-কিশোরের মতোই। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিই পার্ক বানাবো। যেটি হবে রাজধানীর কোলাহল থেকে দূরে কিন্তু রাজধানীর কাছে। নির্মল বিনোদনের জন্যে গাড়ি ভাড়া দিয়ে বেশি দূরে যেতে হবে না। আবার সব রাইডসগুলোও হবে সাধ্যের মধ্যে। ’

এভাবেই শুরু। দেশবাসীকে বিনোদনের চমক দিতেই যাত্রা শুরু হলো যমুনা ন্যাচারাল পার্কের। রাজধানীতে ঢোকার আগে সাভারে আমিনবাজারের অদূরে বলিয়ারপুরের পশ্চিমে মাথা উঁচু করে নিজের অস্থিত্বকে জানান দেয় পার্কটি। প্রথমবারের মতো কোনো গণমাধ্যম হিসেবে বাংলানিউজকে শুরুর কথা বলছিলেন পার্কটির প্রতিষ্ঠাতা রইস উদ্দিন।

বেশ কিছুদিন ধরে সড়কের পাশে দীর্ঘ উচ্চতায় দাঁড়ানো নাগরদোলা আর চরকি মনে করিয়ে দেয় গ্রামীণ মেলাকে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় জলাধারের পাশে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা গাছপালা। তার ভিতর ডাইনোসর, হনুমান কিংবা শিম্পাঞ্জির প্রায় জীবন্ত হয়ে উঁকি দেওয়ার দৃশ্যই কৌতুহলী চোখকে টেনে নেয়।

প্রবেশ মুখেই দেখা মিললো রইস উদ্দিনের। গোটা পার্কজুড়েই সাজ সাজ রব। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। কেউ রঙ করছেন। কেউবা কোনো রাইডসের ট্রায়াল দিচ্ছেন। কেউ ব্যস্ত জীবজন্তুর ভাস্কর্যে রঙ তুলির আঁচড় বসাতে। এসব কাজ নিজেই তদারকি করছিলেন রইস উদ্দিন। বয়স পঞ্চাশের বেশি। খুবই নিরীহ আর সাদামাটা চেহারা। কথাবার্তাতেও সরলত‍ার ছাপ।

পাবনার বেড়া থানার সাড়াসিয়া গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে রইস উদ্দিন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। শুরুটা কেমিক্যালের ব্যবসা দিয়ে। নির্মল বিনোদন নিয়ে শিশু-কিশোরদের সামনে এভাবে হাজির হবেন নিজেও কল্পনা করেননি কখনও।

তো সেই যমুনাপাড়ের ছেলেটিই কীভাবে ঢাকা এসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলো?

‘সাল ১৯৭৯। পাবনা থেকে বেড়াতে গেলাম পুরান ঢাকায় এক দুলাভাইয়ের বাসায়। তার ব্যবসা ছিল কেমিক্যালের। বিদেশ থেকে কেমিক্যাল এনে তা সাপ্লাই করতেন বিভিন্ন ডাইং কারখানায়। যুক্ত হলাম তার সঙ্গে। এভাবে দীর্ঘ ১২ বছর। দুলাভাইয়ের ‘উত্তরা কেমিক্যাল’ ছেড়ে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেই ব্যবসা করার। উত্তরাঞ্চলের করতোয়া নদীর নামে ‘করতোয়া কেমিক্যাল’ নাম দিয়ে শুরু করলাম নিজের কেমিক্যালের ব্যবসা। সততা আর পরিশ্রমের ধারাবাহিকতায় পরে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। ’

বলে চলেছেন রইস উদ্দিন, একসময় দেখলাম, এ ব্যবসাতে তীব্র প্রতিযোগিতা। লাভও তেমন থাকে না। সিদ্ধান্ত নিলাম, অন্য ব্যবসা করার। গাবতলীতে প্রতিষ্ঠা করলাম আমাদের প্রাণের নদী যমুনার নামে ‘যমুনা সিএনজি’। পরে ব্যবসা বাড়াতে সাভারের বলিয়ারপুরে আরেকটি সিএনজি স্টেশন প্রতিষ্ঠার জন্য জমি কিনলাম।

‘২০০৭ সালে বলিয়ারপুর মৌজায় প্রথমে পাঁচ শতাংশ। পরে পর্যায়ক্রমে ১৭, ১০০, ৩৫ ও ৫২ শতাংশ জায়গা কিনে শুরু করলাম বাগান। তবে সরকার নতুন করে সিএনজি স্টেশনের অনুমোদন না দেওয়ায় সেখানে শুরু হলো গাছ লাগানো। গাছ আর প্রকৃতির প্রতি আমার অসীম দুর্বলতা। গাছ লাগানো আমার নেশা। বিভিন্ন নার্সারি ও বৃক্ষ মেলা থেকে শুরু হলো হরেক রকম গাছ গাছালি সংগ্রহ। ’

এর মধ্যে ছেলের বায়না মেটাতে নির্মল বিনোদন পার্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নিজের মধ্যে শুরু হলো এক ধরনের তাড়না। এই পার্ক-সেই পার্ক ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। সাভারে পরিচয় হলো ভাস্কর সাইদুর রহমান জীবনের সঙ্গে। ওনার হাতের ছোঁয়ায় জীবজন্তু হয়ে জীবন্ত ওঠে। তার গড়ে দেওয়া ভাস্কর্য আর প্রকৃতির মেলায় বিভিন্ন রাইডস নির্মাণ এখন শেষ পর্যায়ে, যোগ করেন রইস।

পার্ক চালু হবে কবে এমন প্রশ্নের জবাবে তার উত্তর, আশা করি আগামী ঈদের আগেই খুলে দিতে পারবো। হৃদয়ে বয়ে চলা যমুনা নদীর নামেই পার্কের নাম ‘যমুনা ন্যাচারাল পার্ক’। দুই একরের বেশি জায়গা জুড়ে এ পার্কে সবুজের পাশাপাশি থাকছে ওয়ান্ডার হুইল, মিনি ট্রেন, মেরি গো রাইডস, ভয়েজার বোট, কেবল কারসহ শিশু-কিশোরদের কাছে আকর্ষণীয় আরও অনেক রাইডস।

খানিকটা ঘুরেও দেখালেন, সামনে থাকছে পার্কিং এরিয়া। পেছনে বিস্তৃত জলরাশি। বর্ষায় এক অন্যরকম ভালোলাগা এনে দেবে দর্শনার্থীদের। প্রকৃতির নিবিড়তার মাঝে ছিমছাম পরিবেশও দেবে ভিন্ন এক ভালোলাগা।

বললেন, রাজধানী থেকে দূরত্বের কারণে অনেকেরই কিন্তু অর্থ আর সময় ব্যয় করে বিভিন্ন পার্কে ছুটতে হয়। যাতায়াতেই চলে যায় অনেক সময়। আবার ভাড়ায়ও যায় বাড়তি টাকা। সে দিক দিয়ে আমার এ পার্ক কমিয়ে আনবে যাতায়াত দূরত্ব।

কিন্তু বিনোদনের খরার দেশে রাইডসের মূল্য নিয়ে তো দর্শনার্থীদের মনে বাড়তি একটি চাপ থাকে। এক্ষেত্রে যমুনা ন্যাচারাল পার্কের বৈশিষ্ট কী?

‘বৈশিষ্ট তো রয়েছেই। প্রথমত, তুলনামূলক সাশ্রয়ী। দ্বিতীয়ত, সবার জন্য বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করা। বলতে পারেন, এই লক্ষ্য থেকেই কিন্তু এ পার্কের যাত্রা। ’

এখন কেবল অপেক্ষার পালা। কদিন বাদেই পার্ক মুখরিত হবে শিশু-কিশোরদের ছোটাছুটিতে। আর ক্ষুদে বন্ধুদের ভয় দেখাতে প্রস্তুত ভাস্কর্যের ডাইনোসরগুলো!

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।