ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ত্রিপুরায় বিদ্যুৎকেন্দ্র: ভারতীয় ট্রাক চলাচলে বাংলাদেশে কাটতে হবে ২০০০ গাছ

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১০
ত্রিপুরায় বিদ্যুৎকেন্দ্র: ভারতীয় ট্রাক চলাচলে বাংলাদেশে কাটতে হবে ২০০০ গাছ

ঢাকা: ত্রিপুরায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারী মালবাহী ট্রাক ও লরি চলাচলের জন্য আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কের সংস্কার ও পুননির্মাণে প্রায় দুই হাজার ছোট-বড় গাছ কেটে ফেলতে হবে। এজন্য তিন লাখ টাকা বাজেট বরাদ্দ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

ভারতীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির শনিবারের ঢাকা সফর উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর জন্য গত বৃহস্পতিবার প্রস্তুতকৃত সারসংক্ষেপে  ‘ওডিসি’ (ওভার ডাইমেনশনাল কনসাইনমেন্ট) চলাচলের এ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়।

সার সংক্ষেপে বলা হয়, ওডিসি চলাচলে আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করতে গিয়ে সড়কের পাশের ১৫৪টি বড় গাছ এবং নয়নপুরের কাছাকাছি পুরো ৫ কিলোমিটার অংশে সড়কের পাশে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের আওতায় লাগানো মাঝারি আকারের সব গাছ কেটে ফেলতে হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় পূর্ব দিকে ত্রিপুরার পালাটানায় ৭২৬ দশমিক ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে ওটিপিসি’ (ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড)। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি কলকাতা বা অন্য বন্দর থেকে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নৌবন্দরে এনে সড়কপথে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে নেওয়া হবে।

বনবিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘ওই সড়কের সংস্কার কাজের জন্য সামাজিক বনায়নের গাছ অপসারণের জন্য আমাদের বলা হয়েছে। আমরা দরপত্রের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করবো। ’

তিনি বলেন, ‘৫ কিলোমিটার অংশে প্রায় দুই হাজার গাছ থাকতে পারে। গাছগুলো গত ১০ বছরে লাগানো হয়েছে। ’

আশুগঞ্জ নৌ বন্দর থেকে সুলতানপুর হয়ে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত সড়ক পথের দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার।

সড়ক সংস্কার প্রসঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও রেলপথ বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডির এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সড়ক সংস্কার ও কোনো স্থানে পুনর্নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে। তবে যেহেতু সড়ক ও জনপথের জমি আছে, তাই ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি খুব বেশি অধিগ্রহণ করা নাও হতে পারে। ’

সড়ক প্রশস্ত করতে জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্রাক্ষণবাড়িয়ার এসি ল্যান্ড অফিসগুলো কাজ করছে বলে জানা গেছে।

মালবাহী ভারী যান চলাচলের জন্য ওই সড়কটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ খরচ বহন করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তারা এরই মধ্যে বাংলাদেশের কাছ থেকে সড়কের বর্ণনা নিয়ে দরপত্র আহ্বান করেছে এবং বাংলাদেশের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজের দায়িত্ব পেয়েছে বলেও সূত্র জানায়।

সড়ক ও রেলপথ বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘বন্দর উন্নয়ন ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আমরা আগে একটি সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছিলাম। যেহেতু পুরো টাকাটা ওটিপিসি দিতে চায়, তাই এখন আমাদের কোনো টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। ভারতীয় ওই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ঠিকাদারের মাধ্যমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে কাজটি করবে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কাজটি করবো বলে ঠিক করেছিলাম, তখন প্রায় ২৪ কোটি টাকার বাজেট ধরেছিলাম। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জন্য ২২ কোটি ২০ লাখ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ’     

সড়ক সংস্কারের জন্য ৯টি স্থানে কালভার্ট ও ব্রিজ সংস্কার এবং বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এজন্য সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘হিউম পাইপ’ (মাটির নিচ দিয়ে বড় পাইপ) স্থাপনের কথা বলা হয়।

ভারতীয় ওডিসি চলাচলের জন্য আশুগঞ্জ নৌবন্দরের উন্নয়নসহ আরও কিছু উন্নয়নকাজে প্রায় দুই কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপ এক কোটি ৩০ লাখ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৩০ লাখ ৭০ হাজার, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জন্য আট লাখ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৈরি করা সার সংক্ষেপে গাছ অপসারণ প্রক্রিয়া এবং সময় নিয়ে দ্রুত কাজ করার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া নভেম্বরে ওডিসি চলাচল শুরু করার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চ ক্ষমতার লাইন স্থানান্তরের বিষষেও দ্রুত কাজ করার কথা বলা হয়। সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়, পিডিবি হাই ভোল্টেজ লাইন সংস্কারের জন্য এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ৬ আগস্ট ২০১০ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।