আশুলিয়া থেকে ফিরে : ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে শ্রমিক সর্দার পরিচয়ের দালালরাই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক সংগ্রহ করে এনে দেন। শ্রমিকদের মজুরি বাবদ পাওনা টাকা আগাম পকেটে নিয়ে তারা লাপাত্তা হয়ে যান।
র্যাবের অভিযানে বন্দীদশা থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর ওই শ্রমিকরা বাংলানিউজকে এসব কথা জানান।
শ্রমিকরা জানান, শ্রমিকদের নামে দালালরা আগাম টাকা নিলেও তা শ্রমিকদের দেওয়া হয় না। বরং একেক গ্রুপে ১০/১৫ জন শ্রমিককে এনে ভাটা মালিকের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে দালালরা আরও শ্রমিক আনার নামে পালিয়ে যান। ফলে দালালদের প্রতারণার যাবতীয় দায়ভার নিরীহ শ্রমিকদেরই বহন করতে হয়।
মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার আইরমারা গ্রামের আলম মিয়া (২৮), তার ভাই জুলহাস মিয়া (১৮) ও এরশাদ মিয়া (২০)। তাদের পিতার নাম হিম্মত আলী। আলম মিয়া জানান, গোলাইডাঙ্গা গ্রামের শ্রমিক সর্দার আলাউদ্দিন তাদের তিন ভাইকে ভাল বেতনের লোভ দেখিয়ে ২ মাস আগে এ ইটভাটায় নিয়ে আসেন।
শ্রমিক সর্দার আলাউদ্দিন মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ জন শ্রমিককে এনে এই ইটভাটায় কাজে লাগিয়েছেন। এ পর্যন্ত ভাটা মালিকের কাছ থেকে এক টাকাও মজুরি পাননি বলে মন্তব্য করেন আলম মিয়া।
খুলনার পাটকেলঘাটা থানার ভিটিবাড়ী গ্রামের সলিমউল্লাহর ছেলে লাল্টু মিয়া (৩২) জানান, আরিফুল নামের এক দালাল সর্দার তাদের নিয়ে আসেন। ওই দালালের মাধ্যমে খুলনা থেকে আসেন আজাদ মিয়া (২৬), ইমরান (২২), করম আলী (১৯), মতিয়ার বিশ্বাস (২০), মান্দার আলী (২৮), গোলাম রব্বানী (১৮), লাল্টুসহ মোট ১৫ জন শ্রমিক।
চলতি জানুয়ারি মাসের তিন তারিখে খুলনার ১৫ শ্রমিকের গ্রুপটিকে ইটভাটার কাজে লাগিয়েই লাপাত্তা হয়ে যান দালাল আরিফুল। ওই দালাল পালিয়ে যাওয়ার কারণেই তারা বন্দী হয়ে পড়েন বলে মন্তব্য করেন লাল্টু মিয়া। নির্যাতন সইতে না পেরে খুলনা থেকে আসা ৪ জন শ্রমিক ক’দিন আগেই রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। তারপর থেকে আরও বেশি অত্যাচারের মুখে পড়েন বন্দী থাকা শ্রমিকরা।
যশোর মনিরামপুর এলাকার শ্রমিক সর্দার হাফিজের হাত ধরে ইটভাটায় আসেন মহিদুল (৩০), ওহাব মিয়া (৫০), আশরাফ আলী (৩৫), তার স্ত্রী পারভীন আক্তার (২৬), নজরুল ইসলাম (১৮), আতিয়ার রহমান (২২), আকাশ (১৭) সহ ৮ শ্রমিক।
সাতক্ষীরা তালা এলাকার শ্রমিক সর্দার সেলিম নিয়ে আসে ফয়সাল (১৮), অলি (১৬), আলমগীর (২২), মোখলেছুর রহমান (২০) ও বশিরউদ্দিনকে (৪২)।
মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে
ইটভাটার খুপড়ি ঘরে ৩০ শ্রমিককে হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে বন্দী রাখার খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টায় ঘটনাস্থলে ছুটে যান মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পরিচালক (তদন্ত) অ্যাডভোকেট এলিনা খান। তিনি বন্দীদশা থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া শ্রমিকদের জবানবন্দি নেওয়ার পর বাংলানিউজকে জানান, আধুনিক যুগে জাহেলিয়াত যুগের ক্রীতদাস প্রথার নির্মমতা ঘটেছে সেখানে। কয়েকজন শ্রমিকের শরীরে গুটিবসন্ত, আরও কয়েকজন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা জ্বরে ভুগছেন। কিন্তু কারো প্রতি বিন্দুমাত্র দয়া বা করুণা দেখায়নি ভাটার মালিকরা।
এলিনা খান বলেন, ‘ইটভাটার ভেতরে কী ধরনের নির্মমতা চলেছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ’
তিনি অসহায় শ্রমিকদের পক্ষে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসার্থে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাও কামনা করেন এলিনা খান।
বাংলাদেশ সময় : ০৬৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১১