ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আড়িয়ঁল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণবিরোধী জনতার বিক্ষোভ: ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক রণক্ষেত্র, আহত ২০

মামুনুর রশীদ খোকা, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১১
আড়িয়ঁল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণবিরোধী জনতার বিক্ষোভ: ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক রণক্ষেত্র, আহত ২০

মুন্সীগঞ্জ: বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রতিহত করতে আড়িয়ঁল বিল এলাকার বাসিন্দারা মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত করে।

বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে দোকানপাট-যাত্রীবাহী বাসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে তাণ্ডবলীলা চালায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।



এ সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে।

বিমানবন্দর নির্মাণের প্রতিবাদে আড়িয়ল বিল এলাকাবাসী বুধবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ৩০টি দোকান ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ অর্ধশতাধিক গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও আনন্দ পরিবহন নামের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।

মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সুকুমাররঞ্জন ঘোষ আনন্দ পরিবহনের অন্যতম ব্যবসায়ীক অংশীদার।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দর নির্মাণের প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে আড়িয়ল বিল-রক্ষা কমিটির ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে দুপুরে শ্রীনগর উপজেলার অন্তত ১০ গ্রামের নারী-পুরুষ বাসযোগে ষোলঘর থেকে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষের লোকজন শ্রীনগরে তাদের বাধা দেয়।

মুক্তাঙ্গনে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করেন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে আড়িয়ল বিলবাসী। পরে হাজার হাজার জনতা শ্রীনগরের ছনবাড়ি চৌরাস্তা থেকে কেয়টখালী পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে অবস্থান নেয় তারা। প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান নেওয়া বিক্ষুব্ধ বিলবাসী দোকানপাট-গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর লাঠিচার্জ করলে মারমুখী হয়ে ওঠে তারা। এতে পুলিশ ও বিলবাসীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে লৌহজং থানার এসআই কিবরিয়া, শ্রীনগর থানার এসআই আমিনুল, আড়িঁয়ল বিলের বাসিন্দা দেলোয়ার, মোফাজ্জল, মেহরাব, পথচারী মোমিলা, নিপাসহ প্রায় ২০ ব্যক্তি আহত হন।

অন্যদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বিলবাসীকে লক্ষ্য করে অন্তত ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। তবে এতে কোনো হতাহত হয়নি।

এদিকে, পুলিশের ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাসেও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় সেখানে দ্রুত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা ছুটে যান।

পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আড়িঁয়ল বিলবাসী মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ঘটনার পর পুলিশ খামোকা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে এবং নিরীহ বিলবাসীদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন আন্দোলনরত আড়িঁয়ল বিল-রক্ষা কমিটির আহবায়ক শাহজাহান বাদল।

অপরদিকে, শ্রীনগর সার্কেল এএসপি কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মহাসড়কে বিল এলাকাবাসী এলোপাতাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে।

তিনি জানান, বিুব্ধ এলাকাবাসীর হাতে অন্তত ৫ পুলিশ আহত হয়েছেন। একইসঙ্গে এলাকাবাসীর ১৫ জন আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।

এএসপি জানান, পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব হয়ে উঠলে র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।