ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আশুলিয়ার ইটভাটায় কৃতদাসজীবন

২৭ শিশু-নারী-পুরুষ শিকলমুক্ত

সাঈদুর রহমন রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১১
২৭ শিশু-নারী-পুরুষ শিকলমুক্ত

আশুলিয়া থেকে: শিকলে বেঁধে রাখা এক নারী ও দুই শিশুসহ ২৭ জনকে উদ্ধার করে মধ্যযুগীয় বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়েছে র‌্যাব। ঘটনাটা আশুলিয়ার পাড়াগাঁও এলাকার।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব মানুষকে চাকরির প্রলোভনে এনে জড়ো করা হয়েছিলো ব্রিকস নামে এক ইটভাটায়।

কাজ শেষে কৃতদাসের মতোই তাদের জায়গা হতো তিনটি খুপড়ি ঘরে। দরোজায় থাকতো তালা। বাইরে দা-বটির পাহারা। আর ভেতরে হাত-পায়ে শেকল বেঁধে বন্দি রাখা হতো তাদের। খেতে দেওয়া হতো শিকলেবাঁধা অবস্থাতেই। প্রকৃতিকর্মের মতো নিত্য প্রয়োজন সারতে হতো প্লাস্টিকের বালতিতে।   কোনো কাজে বা কথায় অবাধ্য হলেই নামিয়ে দেওয়া হতো বিদেশি মাগুরের পুকুরে।

বুধবার সন্ধ্যায় যখন র‌্যাব অভিযান চালায়, তখন রাতের খাবার দেওয়া হচ্ছিলো বন্দীদের। হাত-পায়ে শিকলের অলঙ্কার (!) পরেই খাবার খাচ্ছিলো তারা।

তাদের মুক্ত করার সময় ইট ভাটার ম্যানেজার সুলতান মাহমুদ রতন ও নৈশ্য প্রহরী হোসেন গাজীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়- স্থানীয় জাহিদুল, হজরত, জালাল, রাশেক, সাইদুল ও হায়েল নামে ৬ ব্যক্তির যৌথ মালিকানায় ব্রিকস নামের এ ইট ভাটাটি পরিচালিত হয়।

বন্দি উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে আয়োজিত প্রেসকনফারেন্সে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেজর আহসানের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল ওই ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় তাদের হাত-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় রাতের খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছিল। ’

তিনি জানান, এসব মানুষকে গত ৩-৪ মাস ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে এনে কৃতদাসের মত বিনা বেতনে কাজ করানো হত। তাদের যারা সংগ্রহ করে আনত তারা সর্দার নামে পরিচিত।

দিনের কাজ শেষ হলে বন্দি অবস্থায় দা-বটি হাতে তাদের পাহারা দিতো মালিকের লোকজন। মলমূত্র ত্যাগ করতে হতো প্লাস্টিকের বালতিতে।

কেউ স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেই খেতে হতে বেদম পিটুনি। তাদের অত্যাচার সইতে না পেরে ফয়সাল (১৮) নামে এক যুবক আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায়।

বুধবার সকালে ফয়সাল পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আটকে মালিকের লোকজন মাগুর মাছের পুকুরে নামিয়ে রাখে। মাগুর মাছের কামড় সইতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে।

আটককৃত ও উদ্ধাকৃতদের রাতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারী ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।