ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে শ্রীলংকা। এছাড়া সিরামিকস ও চা শিল্পের উন্নয়নে উভয় দেশ একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
উভয় দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে প্রথম কনসালটেশনে বুধবার এসব অগ্রগতি হয়েছে বলে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস সাংবাদিকদের জানান।
এরআগে দিনভর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শ্রীলংকার পররাষ্ট্র সচিব সি আর জয়া সিংঘে এবং মিজারুল কায়েস নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেন।
কনসালটেশন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মিজারুল কায়েস বলেন, ‘বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাংলাদেশে অনুকূলে। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলংকায় আমাদের রপ্তানীও বাড়ছে। তবে বাণিজ্যের পরিমাণ মোটেও সন্তোষজনক নয়। ’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে কনসালটেশনে আমরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্পে শ্রীলংকার বিনিয়োগ রয়েছে এবং এখানে শ্রীলংকার বিনিয়োগ আরও বাড়াতে পারে। এছাড়া শ্রীলংকার চা’য়ের প্যাকেজিং বাংলাদেশে করার প্রস্তাবও দিয়েছি আমরা।
বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে শুল্ক বহির্ভূত বাধা দূর করার বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে বলেও তিনি জানান।
মিজারুল কায়েস বলেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল এবং পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানির প্রস্তাব দিলে শ্রীলংকা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, বর্তমানে শ্রীলংকা অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য আমদানি করে। তাই আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোর পণ্যের মানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। অবশ্য আমরা বলেছি আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য বিশ্বের ৭৪টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং তা উন্নত মানের।
অতি সম্পতি দুই দেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সূত্র ধরে এখন নৌ-পথেও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এছাড়া আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক, বেসরকারি খাতে সম্পর্ক বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষা ও যুব সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
মিজারুল কায়েস বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রীলংকার প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। আমরা চাই এ সংখ্যা আরও বাড়–ক। এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের নার্স এবং তাদের প্রশিক্ষণ স্বল্পতার কথা বিবেচনা করে আমরা এক্ষেত্রে শ্রীলংকার সহায়তা চেয়েছি।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, উভয় দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বড় বড় কোম্পানীগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি ফোরাম গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে। বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গতিশীল করার জন্য এই চুক্তিকে কার্যকর করতে হবে। উভয় পক্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে এ বার্তা পৌছে দেবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত ২০০৩ সালে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে কনসালটেশনের জন্য দুই দেশের মধ্যে প্রটোকল সই হলেও এবারই প্রথম কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হয়। দুই দেশের স্বার্থ সম্পর্কিত বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিভিন্ন সময় আলোচনা না করে কনসালটেশনের আওতায় একসঙ্গে সবগুলো বিষয়েই আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ সময় : ২০০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১১