ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

উৎপাদনশীলতা পরিষদের সভায় ৯ সচিবের ৭ জনই অনুপস্থিত: নতুন সিদ্ধান্ত নেই

আনোয়ারুল করিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১০
উৎপাদনশীলতা পরিষদের সভায় ৯ সচিবের ৭ জনই অনুপস্থিত: নতুন সিদ্ধান্ত নেই

ঢাকা: পাঁচ বছর পর ‘জাতীয় উৎপাদনশীলতা পরিষদে’র (এনপিসি) সভা বুধবার অনুষ্ঠিত হলেও পরিষদের সদস্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৯ জন সচিবের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২ জন। এছাড়া পরিষদের ৩৭ সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২৬ জন।



দীর্ঘদিন পরে শিল্পোন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ এ পরিষদের সভা আয়োজন করা হলেও এজেন্ডাভুক্ত কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি; পরবর্তীতে অন্য সভায় আবারো এসব বিষয় নিয়ে কথা হবে জানিয়ে দুই ঘণ্টায় সভা শেষ করা হয়।  

সরকারি ও বেসরকারি শিল্পকারখানার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৮২ সালে গঠিত ‘জাতীয় উৎপাদনশীলতা সংস্থা’র (এনপিও) মূল কাজ পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া। এ সংস্থাকে নীতি ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দেয় এনপিসি। শিল্পমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকার, শিল্প মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি, পেশাজীবী, গবেষক ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে এনপিসি গঠিত।

সভার সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ২০ জুলাইয়ে ৭ম সভার পর বুধবার এনপিসির ৮ম সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সদস্য ৯ সচিবকে গত ২৬ মে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৈঠকে এদের মধ্যে উপস্থিত হন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব দেওয়ান জাকির হোসেন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব আশরাফুল মকবুল। অনুপস্থিত ৭ সচিব হলেন পরিকল্পনা সচিব, কৃষি সচিব, বাণিজ্য সচিব, সড়ক বিভাগের সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব, শ্রম সচিব এবং তথ্য সচিব। এদের মধ্যে ৫ জন সচিব নিজে উপস্থিত না হয়ে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে অধস্তনদের পাঠিয়ে দেন। তবে সড়ক বিভাগ এবং শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিনিধিই বুধবারের সভায় উপস্থিত হননি।

সচিবদের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে শ্রমিক নেতা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান সভা শেষে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমন্ত্রিত অতিথিদের অতীব জরুরি কাজে ব্যস্ত না থাকলে সভায় উপস্থিত থাকা প্রয়োজন ছিল। ’

তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে প্রয়োজন শিল্পায়ন এবং শিল্পায়নকে সার্থক করতে প্রয়োজন উৎপাদনশীলতা। সিঙ্গাপুর ও ভারতে উৎপাদনশীলতা পরিষদকে শিল্পায়নের জন্য খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। ’

জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টার বুধবার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘সভাটিকে গুরুত্ব না দিয়ে দেখাটা দুঃখজনক। ’

উৎপাদনশীলতা পরিষদের সভা নিয়মিত আয়োজন করার ওপর গুরুত্ব দেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ শ্রমিক নেতা।

এ প্রসঙ্গে এনপিও’র পরিচালক ড. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। হয়তো ব্যস্ততার কারণে তারা আসতে পারেননি। ’

প্রতিনিধি পাঠিয়ে এ ধরনের সভায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব কী-না সে প্রশ্নের অবশ্য কোনো জবাব দেননি এনপিও’র পরিচালক।

সভা সূত্রে জানা গেছে, বুধবারের সভায় ৯টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এরমধ্যে ৫ বছর আগের সভায় নেওয়া ৭টি সিদ্ধান্ত রয়েছে। এজেন্ডা গুলো হচ্ছে- এনপিও’র একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করার তারিখ নির্ধারণ, জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস পালনের দিনক্ষণ নির্ধারণ, এনপিও ভবন নির্মাণ, দেশের বিভিন্ন বিভাগে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন, কলকারখানায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য তথ্য সংগ্রহে এনপিওকে সক্ষমতা অর্জনের উপায় প্রভৃতি। এছাড়া কলকারখানার উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় উৎপাদনশীলতা পুরস্কার’ দেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে ওই বৈঠকে।

এর কোনো বিষয়েই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বুধবারের বৈঠক থেকে।

এনপিও’র পরিচালক ড. নজরুল ইসলাম সভা শেষে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘নানা কারণে পাঁচবছর এনপিসি’র সভা হয়নি। ৫ বছর পর সভা হয়েছে এতে আমি খুশি। এরপর সভা নিয়মিত আয়োজন করার চেষ্টা করবো। ’

জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করার তারিখ নির্ধারণ এবং জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস পালনের দিনক্ষণ নির্ধারণ বিষয়টি ২০০৫ সালের সভাতেও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গত ৫ বছরে এর কোনো তারিখ হয়নি। বুধবারের বৈঠকেও এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে এনপিও’র পরিচালক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘তারিখ নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। কারণ জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ”

এনপিসির সভায় শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা পরিষদকে অনুৎপাদনশীল হলে চলবে না। ” তিনি আরো বলেন, ‘বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে সহায়তা করবে সরকার। কারণ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমেই দেশে শিল্পায়ন বাড়ানো সম্ভভ। এজন্য তাই উৎপাদনশীলতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ’

বুধবারের সভায় আমন্ত্রিত অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এএসএম সফিউল্লাহ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ময়মনসিংহ) উপাচার্য ড. এমএ সাত্তার মন্ডল, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সভাপতি ড. এসএম নজরুল ইসলাম, বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ. রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাই শিকদার, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবুল কাশেম খান, বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প সমিতির সভাপতি কেএম আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ পাটকল এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টার, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খলিলুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ১৪ জুলাই ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।